পোল্ট্রি ফার্মে যে কোন সমস্যার পিছনে যে বিষয়গুলি জড়িত
উদাহরণ হিসেব কয়েকটি প্রশ্ন
একই ডিলারের বিভিন্ন খামারীর বিভিন্ন প্রডাকশন কারণ কি?
একই কোম্পানীর বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন খামারীর প্রডাকশন বিভিন্ন কেন?
একই বাচ্চা কোম্পানীর বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন খামারীর প্রডাকশন বিভিন্ন কেন?
# একই দিনের বাচ্চা করিমের ফার্মে সমস্যা নাই রহিমের ফার্মে আছে কারণ কি
#রাসেলের ফার্মে প্রডাকশন ৯৭% আর তারেকের ফার্মে ৯০% কারণ কি
#আগে ত প্রডাকশন ভাল হত ও মুরগি ভাল ছিল থাকত,এখন কেন থাকেনা।
#বেলালের মুরগি ১২০ গ্রাম খেয়ে যে ডিম দেয় আলালের মুরগি ১১০ গ্রাম খেয়ে সে ডিম দেয় কারণ কি?
#নাসির কম দামের খাবার দিয়ে যে ডিম পায় হাসান বেশি দামের ফিড দিয়ে সমান ডিম পায় কারণ কি?
সব গুলো প্রশ্নের উত্তর নিচের আলোচনায় আছে।
নিচের ৭টি পয়েন্টে পোল্ট্রির সমস্যার যে কোন প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে।
১।বাচ্চা
২।খাবার
৩। ব্যবস্থাপনা
৪।পরিবেশ ও রোগ
৫। ডায়াগ্নোসিস, চিকিৎসা ওমেডিসিন
৬।খামারী
৭।ভাগ্য
১।বাচ্চা
এই ৭টি বিষয়ের মধ্যে যার যতগুলি পয়েন্ট ভাল থাকবে তার ফার্ম তত ভাল থাকবে।
ব্রিডার ফার্ম থেকে বাচ্চা যদি লিউকোসিস,মেরেক্স(ব্রয়লারের ক্ষেত্রে রিও,আই বি এইচ,এডিনো) নিয়ে আসে তাহলে অন্য ৬টি পয়েন্ট ভাল থাকলেও ভাল রিজাল্ট পাওয়া যাবে না।
ব্রয়লারের বাচ্চা বিভিন্ন গ্রেডের হয় যেমন এ,বি।তাছাড়া বাসি বাচ্চা মানে আজকের বাচ্চা পরের দিন বিক্রি করা।তাই বি গ্রেড ও বাসি বাচ্চার বিভিন্ন সমস্যা হয় ও ওজন কম আসে।কোন কোন সময় ভাল আসে যা বিভিন্ন পয়েন্টের সাথে জড়িত।
মেরেক্স ভার্টিকেল ডিজিজ না হলেও ব্রিডার আক্রান্ত হলে কন্টামিনেশনের মাধ্যমে বাচ্চা আক্রান্ত হয়।
ব্রিডার থেকে মাইকোপ্লাজমা,সালমোনেলা জীবাণু বাচ্চাতে চলে আসে।
এই ক্ষেত্রে খামারীর তেমন কিছু করার থাকেনা।
তবে বাচ্চা নেয়ার আগে বাচ্চা কোম্পানী সম্পর্কে যাদের জানাশুনা আছে তাদের পরামর্শ নিতে হবে।
বাচ্চার দাম বেড়ে গেলে বাচ্চার গ্রেডিং করেনা,আবার ছোট ছোট অনেক কোম্পানী ব্রিডার নিয়ে আসতেছে যারা অনেক সময় অনেক কিছুই মেইন্ট্রেইন করতে পারেনা তখন বাচ্চার মান ভাল থাকেনা।
আবার বাচ্চার দাম কমে গেলে ও কেউ কেউ গ্রেডিং করেনা।
বাচ্চার দাম যখন মাঝামাঝি থাকে তখন গ্রেডিং ভাল করে।
ব্রিডার ফার্মে কে কত ভাল ব্যবস্থাপনা ও টিকার সিডিউল মেনে চলে তার উপর বাচ্চার মান নির্ভর করে।
তাছাড়া হ্যাচারীও বিভিন্ন রোগ ছড়াতে বা বাচ্চার মানের ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে।যেমন ইকলাই,ফাংগাস,সাল্মোনেলা
২।খাবার
বিভিন্ন কোম্পানী বিভিন্ন রকম খাবার,তাছাড়া লেয়ারে আছে লোজ ফিড।
খাবারের উপাদানের মানের উপর রোগ ব্যাধি ও প্রডাকশন অনেক টা নির্ভর করে।কিন্তু এটি বুঝা যায়না।
কারণ রোগ হলে আমরা শুধু জীবানূকে দায়ী করি কিন্তু ফিডের কারণে যে জীবানূ আক্রমণ করে তা মাথায় আসেনা।
তবে এটাকে প্রধান কারণ বলা যাবেনা।
ফিডের ফর্মুলা যদি ভাল না হয় বা খাদ্যে যদি মাইকোটক্সিন,ক্লোস্টিডিয়াম বা সালমোনেলা থাকে তাহলে ইমোনিটি কমে জীবানূ(ব্যাক্টেরিয়া,ভাইরাস,প্রোটোজোয়া,ফাঙ্গাস) দ্বারা সহজে আক্রান্ত হতে পারে।এন্টিকক্সিডিয়াল প্রডাক্ট যদি ভাল না হয় বা ডোজ ঠিক না থাকে
ফিড ইনগ্রেডিয়েন্টঃ
ভুট্রা,সয়াবিন,ফুল ফ্যাট সয়াবিন,কুড়া,গম,সি জি এম,লাইসিন ও মেথিওনিন,এন্টি কক্সিডিয়াল,প্রোটিন(ডি ডি জি এস,এম বি এম,প্রোকন,এগ্রোফিশ,ফিসমিল),ডি সি পি,প্রিমিক্স,পাথর ।
এর মধ্যে কুড়া ও ভুট্রায় যথেষ্ট ভেজাল মানে মান খারাপ থাকার সম্বাবনা থাকে।
অনেক সময় ইচ্ছা থাকলেও ভাল মানের পাওয়া যায়না।
ফিড এডিটভস( ক্লোলিন ক্লোরাইড,সোডি বাই কারব,এন্টি অক্সিডেন্ট,ইমালসিফায়ার,টক্সিন বাইন্ডার,সালমোনেলা কিলার,লবন)
স্টোরেজ কন্ডিশনের উপর মান অনেকটা নির্ভর করে।
ফিড ফরমুলেশনের ভুমিকা অনেক বিশেষ করে যারা লোজ ফিড বানায়।
তাছাড়া আবহাওয়ার সাথে ফিড ফর্মুলেশনের সম্পর্ক আছে,বিভিন্ন আবহাওয়ায় ফর্মুলা বিভিন্ন রকম হয়।
ফিডের উপাদানের দাম নির্ভর করে আন্তজাতিক বাজারের উপর কারণ পোল্ট্রির অধিকাংশ উপাদান বিদেশ থেকে আনতে হয়।
দাম বেড়ে গেলে মান খারাপ হয় ফলে প্রডাকশনের উপর প্রভাব পড়ে।
খাবার ভাল না থাকলে আমাশয়,মাইকোটক্সিন,ওজন কম বা প্রডাকশন খারাপ হতে পারে।
কিছু ছোট খামারই ফিড ইনডিয়েন্টের সব উপাদান ব্যবহার করে না কিছু আইটেম বাদ দেয় যেমন ইমালসিফায়ার,এন্টি অক্সিডেন্ট ও খাবার সোডা।কলিন ক্লোরাইডীএখন অবশ্য লোজ ফিড ৯০% কমে গেছে।
৩। ব্যবস্থাপনা
ব্যবস্থাপনা বলতে অনেক কিছু বুঝায় যেমন
সেড তৈরি ও বাচ্চা আসার আগে প্রস্তুতি
ব্রুডিং
টিকার সিডিউল
লিটার ও পর্দা ব্যবস্থাপনা
পানি ও খাবার ব্যবস্থাপনা
আলো ব্যবস্থাপনা
ঠোটকাটা ও ব্যবস্থাপনা
বায়োসিকিউরিটি
অধিকাংশ ফার্মে এই ব্যবস্থাপনা ঠিক নেয়।
ব্যবস্থাপনা অংশটি খামারীর হাতে এটা ঠিক রাখা উচিত,তবে খামারী অনেক কিছু জানে না।তারা আগে যে ভুল করে আসছে এখনও তাই করে।মনে করে আগে ত এভাবেই হত।
কেউ যদি সেড চতুর্ভুজের মত করে বা নিচু করে বা উত্তর দক্ষিণ করে তাহলে তার ফলাফল খারাপ হবে।একবার সেড করার পর তা ঠিক করা হয় না।ভূমি থেকে মিনিমাম ১ফুট উচু করে ফ্লোর করতে হবে।টিনের বাড়তি অংশ ৩ফুট বাড়তি রাখতে হবে।
এতে গরমে প্রচুর মরটালিটি হয় এমন কি বিভিন্ন রোগ হয়ে যেতে পারে।কলেরা।
যা ব্যবসাকে ধবংস করে দিতে পারে।
বিভিন্ন বয়সের মুরগি এক সাথে,আবার কেউ এক ব্যাচ থেকে আরেক ব্যাচের মাঝে গ্যাপ কম দিচ্ছে।সেড পরিস্কার কয়ার পর ১৫দিন গ্যাপ দিয়ে ব্রয়লার তুলা উচিত।লেয়ার ২ মাস পর।
টিকার সিডিউলে ভুল হলে খামারী লোজার হতে পারে যেমন করাইজা বা রানিক্ষেতের টিকার সিডিউলের কারণে ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে।
সামান্য পর্দার কারণে ভিতরে গ্যাস হয়ে রানিক্ষেত বা গাম্বোরু বা বর্ষায় লিটারে পানি ঢুকে আমাশয় হতে পারে।পর্দা নিচে থেকে ইচ্ছে ইনুযায়ী তুলার ব্যবস্থা থাকতে হবে বা ২টি পর্দা থাকতে হবে।নিচের ৪ফুট উপরে ৪ ফুট,এক দম উপরে ফাকা রাখতে হবে ১ফুট
লাইটিং সঠিক না হলে ক্যানাবলিজম হবে,ডিম খাবে,ওজন কম বেশি হতে পারে,খাবার বেশি খাবে,খরচ বেশি হবে।
অধিকাংশ সমস্যাই ডিম পাড়ার আগে বুঝা যাবেনা,যখন বুঝা যাবে তখন কিছু করার থাকে না।
৪। পরিবেশ ও রোগ
বিভিন্ন পরিবেশে রোগের বিস্তার বিভিন্ন,একেক এলাকায় একেক পরিমাণ মুরগি,কোন এলাকায় শীত ও গরম বেশি,আবার কোন এলাকায় ২টিই সমান।এসবের উপর রোগের মাত্রা নির্ভর করে।
বিভিন্ন পরিবেশ,বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন রোগ হয় তাই এসব মোকাবেলা করে টিকে থাকতে হয়।
গাজীপুর ও টাংগাইলে বেশি লেয়ার থাকার কারণে রোগ বেশি এবং সেখান থেকে দিন দিন লেয়ার কমে যাচ্ছে।
আবার নরসিংদীতে ব্রয়লার ও লেয়ার ২টি বেশি তাই রোধ ব্যাধি ও বেশি।
অন্য এলাকায় লেয়ার স্থানান্তিত হচ্ছে।
আবার কিছু এলাকায় লেয়ার ভাল হয় না।যেমন চুয়াডাংগা বিশেষ করে যেখানে বেশি শীত ও বেশি গরম।
৫। ডায়াগ্নোসিস,চিকিৎসা,মেডিসিন
বিভিন্ন কারণে রোগ আসতেই পারে তা যদি সঠিকভাবে ডায়াগ্নোসি করা না যায় তাহলে সব কিছু লসের খাতায় চলে যেতে পারে।
ছোট একটি ভুলের কারণে মুরগি সুস্থ না হতে পারে বা মারা যেতে পারে।
ভাল মানের মেডিসিনও গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।
বিভিন্ন সমস্যায় ভাল মানের মেডিসিনের ব্যবহার বিশেষ করে এন্টিবায়োটিক।
এখানে ডাক্তারের ভূমিকা বেশি।
৬।খামারী
খামারীর সচেতনতা,দক্ষতা ও মনোযোগ অনেক ভূমিকা পালন করে।
খামারীর ভূলের কারণে ও খামারী নিঃস্ব হয়ে যেতে পারে।
৮০% খামারী সঠিক ব্যবস্থাপনা জানে না,জানালেও মানতে চায় না ৫০% খামারী।
অনেকের ইচ্ছা আছে কিন্তু বিভিন্ন কারণে ভাল ব্যবস্থপনা মেনে চলতে পারেনা।
৭।ভাগ্য
খামারী সব কিছু করার পর যদি সমস্যার সমাধান না হয় তাহলে ভাগ্যই বলতে হয়।
অনেক খুব পরিস্কার ও জেনেশুনে সব করে তারপরেও রোগ হয় বা বিভিন্ন সমস্যা হয় আবার কেউ তেমন কিছু করেনা তারপর ও অনেক ভাল হয়।এটি ভাগ্য।
ব্রিডার ফার্মে অনেক বায়োসিকিউরিটি মেনে চলে তবু সেখানে রোগ হয় মানে আল্লাহর ইচ্ছা।
দেশের ৫০% ফার্ম ভাগ্যের উপর টিকে আছে।
এই ৭টি পয়েন্ট সবার থাকেনা।তবু কেউ টিকে আছে আবার কেউ লসে আছে কারণ কি?
ফার্ম এর সংখ্যা এবং রোগ জীবানূ যদি কম থাকে তাছাড়া পরিবেশ যদি ভাল থাকে তাহলে উপরের ৬টি পয়েন্ট তেমন খুব বেশি ভাল না হলেও চলবে।
আর যদি ৩টি পয়েন্ট খারাপ হয়(পরিবেশ প্রতিকূল,রোগ জীবানূ ও ফার্ম বেশি হয়) তাহলে উপরের বাকি ৪টি পয়েন্টই গুরুত্বপূর্ণ মানে টিকে থাকতে হলে অন্য ৪টি বিষয়ের উপর জোর দিতে হবে।
যদি খাবার খারাপ হয় তাহলে ভাল বাচ্চা ও ভাল ব্যবস্থপনা দিয়ে মেক আপ করতে হবে।
যদি বাচ্চা ও খাবার ভাল হয় তাহলে ব্যবস্থাপনা খুব বেশি ভাল না হলেও চলে।
তবে বাচ্চা যদি মেরেক্স,রিও(ব্রয়লার) ও লিউকোসিস নিয়ে আসে তাহলে তেমন কিছু করার থাকেনা।
অনেকে ভাল ব্যবস্থাপনা দিয়ে মোটামুটি মানের খাবার দিয়েও চালিয়ে নিতে পারে।সংসারে ৫জন মেম্বার থাকলে ১জন খারাপ হলেও সবাই মানিয়ে নিয়ে চলতে পারে।কিন্তু ৫জনের মধ্যে যদি ২ বা ৩জনই খারাপ থাকে তাহলে চলা যায় না।
কোন কারণে রোগ হলে তা নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসা দিয়ে ফার্মকে লসের হাত থেকে বাচিয়ে দেয়া যায়।এখানে ডাক্তারের বিষয় জড়িত।
শুধু রোগ নির্ণয় নয় টোটাল বিষয়ে ডাক্তারের দক্ষতা থাকা উচিত।
কারণ যে কোন রোগ বা প্রডাকশনের সাথে টোটাল ৬টি বিষয় জড়িত।
শেষ কথা হলো যার পয়েন্ট যত বেশি তার রিজাল্ট তত ভাল।
পয়েন্ট বলতে বাচ্চা,খাবার,ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ ও রোগ,ডায়াগ্নোসিস ও চিকিৎসা,ভাগ্য।
২-৩টি পয়েন্ট অন্তত ভাল থাকতে হবে।ভাল প্রডাকশন পাওয়ার জন্য।
বর্তমানে কিছু কিছু এলাকায় ভাল করতে হলে সব পয়েন্টে জোর দিতে হবে কারণ পরিবেশ,ফার্মের সংখ্যা,রোগ জীবানূ আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে।
খামারী,ডিলার,কোম্পানী ও ডাক্তার চিন্তা করবে কে কিভাবে ৭টি পয়েন্ট মোকাবেলা করবে।
খামারী মুরগি পালে কিন্তু তার হাতে ব্যবস্থাপনা ছাড়া আর কিছু করার থাকেনা।
সবই অন্যের হাতে।৭টি পয়েন্ট ৬ জন নিয়ন্ত্রণ করে।
খুবই ঝুঁকির ব্যবসা
জেনে রাখা ভাল
যারা টিকা বা ঠোটকাটে তাদের অধিকাংশ ঠিকভাবে টিকা বা ঠোটকাটতে পারে না।
কতক্ষণ আগে টিকা ফ্রিজ থেকে বের করে রাখতে হবে তা জানে না।
তাড়াতাড়ি টিকা দেয় বা ঠোটকাটে অধিক ফার্মে যাবার জন্য।অনেক সময় ঠোট বেশি বা কম কাটে।
ডিবেকার মেশিন বা ভ্যক্সিন গান ঠিক মত পরিস্কার করে না।
পুরাতন ব্লেড দিয়ে ঠোট কাটে এবং এক নিডল অনেক বার ব্যবহার করে।
এক ফার্ম থেকে অন্য ফার্মে ভ্যাক্সি্ন বা ইঞ্জেকশন করতে গেলে গোসল বা পোশাক পরিবর্তন অনেকে করে না।
অনেক রোগই ভ্যাক্সিন ম্যান এক ফার্ম থেকে অন্য ফার্মে ছড়িয়ে থাকে,তাদের কোন প্রশিক্ষণ নাই।
পক্স ও মেরেক্সের টিকা ১-১.৫ ঘন্টার মধ্যে দিতে হয় অথচ ২-৩ঘন্টায়ও অনেকে শেষ করতে পারে না।