অনেক সময় পোস্টমর্টেম করলে বেশী বয়সের মুরগীতে কুসুমথলির অবশিষ্টাংশ দেখতে পাওয়া যায়।এটি সাধারনত কালচে বা সবুজাভ বর্নের দেখায়। এই অবস্থাকে #Remnant Yolk বলে।কুসুমথলি বাচ্চার শরীরে পরিপূর্নভাবে শোষিত না হলে এমন ঘটনা দেখতে পাওয়া যায়।
নরমালী ৩-৫দিনের মধ্যে কুসুম শুকিয়ে যাবে যদি সমস্যা না থাকে।
হ্যাচারীতে বাচ্চা ফুটে বের হয় রাত প্রায় ৩টার দিকে।তারপর লেয়ার হলে মেরেক্স ভ্যাক্সিন দিয়ে সকালে ১০-১২ দিকে ফার্মে যাওয়া উচিত কিন্তু আমাদের দেশে তা সম্বব হয় না।হ্যাচারী অনেক দূরে হওয়ায় বাচ্চা দেরিতে যায়।
কুসুমথলি পরিপূর্নভাবে শোষিত না হবার কারন-
#তাপমাত্রা
তাপমাত্রা যদি সঠিক মাত্রায় না থাকে তবে কুসুমথলি পরিপূর্নভাবে শোষিত হয় না।প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত বা কম তাপমাত্রায় ব্রুডিং করলে কুসুমথলি পরিপূর্নভাবে শোষিত হয় না।তাছাড়া ব্রুডিং এর সময় তাপমাত্রা উঠা-নামা করলেও কুসুমথলি ঠিকমত শোষিত হয় না।কুসুমথলি সঠিক সময়ে ও পরিপূর্নভাবে শোষিত হবার জন্য সঠিক তাপমাত্রার ভূমিকা অপরিসীম।
#জীবানু_সংক্রমন
কুসুমথলিতে জীবানুর সংক্রমন ঘটলে কুসুমথলি ঠিকমত শোষিত হতে পারে না।সালমোনেলা,ই-কোলাই,স্ট্রেপটোক্কাস,স্ট্রেফাইলোক্কাস, ক্লোসট্রেডিয়াম,সিউডোমোনাস সহ বহু প্রজাতির গ্রাম পজেটিভ ও গ্রাম নেভেটিভ এনারোবিক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা কুসুমথলিতে সংক্রমন হতে পারে। সাধারনত বাচ্চার নাভীমুখ ও দূষিত খাদ্য-পানি দ্বারা এ সকল জীবানু বাচ্চাতে সংক্রমন ঘটায়,যা পরবর্তিতে কুসুমথলিতে গিয়ে বংশবৃদ্ধি করে এবং সংক্রমন ঘটিয়ে কুসুমথলির শোষন প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটায়।
#খাদ্য_প্রদান
অনেকে বাচ্চা ব্রুডারে দেবার ২-৪ ঘন্টা পর বাচ্চাকে খাদ্য প্রদান করেন।বিভিন্ন গবেষণাতে দেখা গিয়েছে দেরীতে খাদ্য প্রদান করলে বাচ্চার কুসুমথলি দেরীতে শোষিত হয়।Moran এবং Rainhart নামক দুজন গবেষক লক্ষ্য করেন,যে সকল বাচ্চাকে হ্যাচিং এর পরপরই খাদ্য প্রদান করা হয় তাদের কুসুমথলি দ্রুত শোষিত হয় অপরদিকে যে বাচ্চাগুলোকে হ্যাচিং এর পরপরই খাদ্য প্রদান না করে বেশকিছু সময় পর খাদ্য প্রদান করা হয় তাদের কুসুমথলি দেরীতে শোষিত হয়। Noy এর গবেষনায় প্রকাশ পায় হ্যাচিং এর পরপর খাদ্য প্রদান না করা বাচ্চার চেয়ে খাদ্য প্রদান করা বাচ্চার কুসুমথলি দ্রুত শোষিত হয়।তিনি ব্যাখ্যা করেন, “হ্যাচিং এর পরপর বাচ্চা খাদ্য গ্রহন করলে অন্ত্রের সক্রিয়তা বৃদ্ধি পায় এবং কুসুমথলি থেকে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান অন্ত্রে প্রবেশ করে কুসুমথলির দ্রুত শোষন ঘটায়।” খাদ্য প্রদান না করা বাচ্চার অন্ত্রের সক্রিয়তা কম থাকে বিধায় কুসুমথলির উপাদানসমুহের অন্ত্রে প্রবেশের হার কম থাকে এবং কুসুমথলি ধীরে ধীরে শোষিত হয়। Santos এবং Silversides এর গবেষনায় উঠে আসে কুসুমথলির শোষন প্রক্রিয়া খাদ্যতন্ত্রের সক্রিয়তার সাথে সম্পর্কযুক্ত।যে বাচ্চার খাদ্যতন্ত্র যত সক্রিয় তাদের কুসুমথলি তত দ্রুত শোষিত হয়।সুতরাং হ্যাচিং এর পরপরই খাদ্য প্রদান করে বাচ্চার খাদ্যতন্ত্রে সক্রিয়তা বৃদ্ধি করতে হবে।এ কারনেই বর্তমানে নারিশ সহ অনেক কোম্পানী বাচ্চা ডেলিভারী বক্সে কিছু খাদ্যের দানা ছিটিয়ে দিয়ে বাচ্চা ট্রান্সপোর্ট করে।যাতে বাচ্চা হ্যাচিং এর পরপরেই খাদ্য গ্রহন করে খাদ্যতন্ত্রের সক্রিয়তা বৃদ্ধি করতে পারে। এ থেকে পরিষ্কার ব্রুডারে বাচ্চা দেবার ২-৪ ঘন্টা পর বাচ্চাকে খাদ্য প্রদান করার যে প্যাক্টিস এতোদিন করেছেন তা সঠিক নয়।
১মে সুজি বা ভুট্রা ভাংগা দেয়া ভাল ।
#হ্যাচারীগত_সমস্যা
১. কুসুমথলি দেরিতে শোষিত হবার পিছনে হ্যাচারীগত কিছু কারন রয়েছে।যেমন ইনকিউবেশন পিরিয়ডে যদি কম তাপমাত্রা ও অধিক আদ্রর্তা প্রদান করা হয় তবে ডিম থেকে কম ময়েশ্চার বের হয়।ফলে এই ডিম থেকে যে বাচ্চা বের হয় তার কুসুমথলি অনেক বড় থাকে।তাছাড়া ডিম যদি হ্যাচারে অধিক সময় রাখা হয় তবেও বাচ্চার কুসুমথলি আকারে বড় হতে পারে।এই ধরনের বাচ্চার কুসুমথলি শোষিত হতে বেশী সময় লাগে এবং বেশীরভাগ ক্ষেত্রে অশোষিত বা আংশিক শোষিত অবস্থায় থেকে যায়।
২. ব্রিডার বা হ্যাচারীতে যদি পর্যাপ্ত হাইজিন মেনে না চলে তবে বাচ্চা বিভিন্ন জীবানু দ্বারা সংক্রমিত হয়।এই ধরনের বাচ্চার কুসুমথলি পূর্ব থেকেই সংক্রমিত থাকে যার ফলে এই বাচ্চা গুলোর কুসুমথলি পূর্নভাবে শোষিত হতে পারে না এবং শরীরে আংশিকভাবে রয়ে যায়।
কুসুমথলি দ্রুত ও পরিপূর্নভাবে শোষনের জন্য করনীয়-
১. সঠিক মাত্রায় তাপ প্রদান করতে হবে।খেয়াল রাখতে হবে যেন ব্রুডারের তাপমাত্রা উঠা-নামা না করে।
২. পরিষ্কার ও জীবানুমুক্ত তুষের উপর ব্রুডিং করতে হবে এবং জীবানুমুক্ত খাদ্য ও পানি প্রদান করতে হবে।পত্রিকার উপর খাবার ছিটিয়ে না দেয়াটাই উত্তম।চিক পেপার দিলে ৩-৪দিন খাবার দেয়া যায় ,পায়খানা শুকিয়ে যায় ফলে বার বার লিটার বদলানোর দরকার নাই।
৩. বাচ্চাকে অভুক্ত রাখা যাবে না।বাচ্চা ব্রুডারে দেবার আগেই ব্রুডারে খাদ্য ও পানি দিয়ে রাখতে হবে যেন বাচ্চা ব্রুডারে গিয়েই তার প্রয়োজনমত খাদ্য খেতে পারে।
ডা শুভ দত্ত।নারিশ পোল্ট্রি ফিড লিঃ