ইনকিউবেটরে ডিম ফুটানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে ডিমকে সঠিক সময়ে সঠিক কোনো ঘুরানো।
বিশেষ করে যারা হাতে ডিম ঘুরায় তাদের জন্য ডিম ঘুরানোর সঠিক নিয়মটা জানা অনেক জরুরী।
সঠিক তাপে ভ্রুনের সঠিক গঠনের জন্য এবং ডিমের খোসা থেকে ভ্রুনকে একটু দুরে রাখার জন্য ডিম ঘুরানো খুবই জরুরী।
ডিমের তরল অংশ অপেক্ষা কুসুমের ওজন বেশি থাকার ফলে কুসুম নিচে থাকে এবং কুসুমের উপরে দিক থেকে ভ্রুনের গঠন শুরু হয়।
ডিম যে কোনো একদিকে স্থীর করে রেখে তাপ দিলে সঠিক গঠন বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং খোসার কাছাকাছি ভ্রুন সঠিক ভাবে বাড়তে পারেনা।
সেই কারনে ডিমে সঠিক তাপমাত্রা রাখার পাশাপাশি এদিক ওদিক কাত করে দেয়া হয় যাতে ভ্রুনের গঠনটা স্বাভাবিক ভাবে হয়।
ডিম ঘুরানোর জন্য সাধারনত ২ধরনের পদ্ধতী ব্যবহার করা হয়।
*প্রথম পদ্ধতি*
ডিমকে শুয়ায়ে রেখে প্রতিদিন ৪/৫বার ডিম এদিক ওদিক ঘুরিয়ে রাখা হয়।
*দ্বিতীয় ্পদ্ধতি*
ডিমকে একটা ট্রের মধ্যে ফ্রেম আটকে রেখে পুরো ট্রে টাকেই এদিক ওদিক ঘুরানো হয়।
এই পদ্ধতী গুলো আবার দুইধরনের সুবিধার জন্য ব্যবহার করা হয়।
(১).প্রথম পদ্ধতী ডিম শুয়ায়ে রেখে ঘুরানো এটা প্রচিন পদ্ধতীও বলাচলে
মুরগী বা কোনো পাখি ডিম শুয়ানো অবস্থায় তা দেয় এবং ঠোঁট দিয়ে ডিম নাড়িয়ে নেয়।
সাধারনত এই পদ্ধতী ছোট হাতে ডিম ঘুরানো মেশিন গুলোতে বেশি ব্যবহার হয়।
এই পদ্ধতী এতটা কর্জকারি যে এটা সঠিক নিয়মে করতে পারলে সর্বোচ্চ হ্যচিংরেট আসে,
কিন্তু এই পদ্ধতীকে সঠিকভাবে হাতে করা গেলও অটোমেটিকভাবে করাটা বেশ জটিল।
একটা ফ্রেমের মধ্যে ডিম রেখে ফ্রেম ঠেলা দিলে ডিম ঘুরে কিন্তু এই পদ্ধতী মুরগী এবং হাতে ডিম ঘুরানোর মত সম্পূর্ণ নিখুঁত হয় না
এবং এই পদ্ধতীতে সবচেয়ে ঝুকিঁপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ডিম যে এ্যংগেলে ঘুরছে হঠাৎ ভুল বসত তার উল্টো দিকে ঘুরে গিয়ে দীর্ঘ সময় থাকলে হ্যচিংরেট বিপদজনক ভাবে কমে যাবে।
(২)দ্বিতীয় পদ্ধতী হচ্ছে একটা ট্রে যেটাকে আমরা সেটার ট্রে বলে থাকি সেই ট্রের ফ্রেমে ডিম রেখে সেই ট্রেকে ৩৮ডিগ্রী থেকে ৪৫ডিগ্রী এ্যংগেলে এদিক ওদিক ঘুরিয়ে দেয়া।
সাধারনত বড় এবং বেশি ধারনক্ষমতা সম্পূর্ণ ইনকিউবেটর এই পদ্ধতী ব্যবহার হয়।
এই পদ্ধতীর বেশ কিছু সুবিধা রয়েছেঃ
অল্প স্থানে অধিক ডিম রাখা যায়
খুব সহজে এক সাথে হাজার হাজার ডিম ঘুরানো যায়,
খুব সহজে সকল ডিম পর্যাপ্ত আহাওয়া পৌছানো যায়,
প্রথম থেকে যে এ্যংগেলে ঘুরছে শেষ পর্যন্ত ঐ এ্যংগেলেই ঘুরে তাই ডিম শুয়ায়ে রেখে ঘুরানোর মত ডিম উল্টে যাবাব সম্ভবনা একদমই থাকেনা।
সেই কারনে অটোমেটিক ইনকিউবেটর গুলোতে এই পদ্ধতী প্রচলন বেশি।
★ট্রে টাকে কম RPM গিয়ার মোটর দিয়ে টাইমার দ্বারা নিদৃষ্ট সময় পর পর ডিম ঘুরানোর হয়ে থাকে,
এই বৈশিষ্ট দ্বারা অনেকেই ইনকিউবেটরকে ফুল অটোমেটিক ইনকিউবেটর বলে ধরে নেয়।
অনেক খামারি ভাই সেটার টার্নিং টলি বানাতে লিমিট সইচ সেট করতে অনেক সমস্যায় পড়েন।
টার্নিং টলি তৈরির পরে মুল কাজ হচ্ছে লিমিট সুইচ স্থাপন করা এবং টলিটা পরিক্ষা করা,
লিমিট সুইচ পরিক্ষার সময় সামান্য একটু ভুল হলেই দুর্ঘটনা ঘটবে,
তাই কিছু কৌশলের মধ্যমে কয়েকটি ধাপে এই কাজটি সম্পূর্ণ করা হয়।
*প্রথম ধাপঃ একদম উপরের ট্রের উপরে লিমিট সুইচ বাসানো যায়,
অথবা নিচের ট্রের নিচে লিমিট সুইচ বসানো যায়,
*দ্বিতীয় ধাপঃ লিমিট সুইচ বাসানোর পরে ট্রেটাকে হাতে এদিক ওদিক ঘুরিয়ে দেখতে হয় ট্রে টা লিমিট সুইচে সঠিকভাবে চাপ দিচ্ছে কিনা।
*তৃতীয় ধাপঃ লিমিট সুইচের সাথে মোটরের কানেকশন দিয়ে মোটরের চেন ফেলে দিয়ে যে কোনো এক পাশের লিমিট সুইচের সংযোগ এবং মোটরের কমন পিনের সাথে বিদ্যুতের সংযোগ দিতে হবে, এতে মোটরটা যদি সংযুক্ত লিমিট সুইচের দিকে ঘুরতে থাকে তখন বুঝতে হবে সঠিক হয়েছে,
এর পরে মোটর ঘুরা অবস্থায় টার্নিং ট্রে টাকে একটু হাতে ঘুরিয়ে ঐ প্রন্তের লিমিট সুইচে ট্রে দ্বারা চাপ দিতে হবে এতে লিমিট সুইচের চাপে যদি মোটর টা বন্ধ হয়ে যায় তখন বুঝতে হবে এই কানেকশন সঠিক হয়েছে, একইভাবে পরের লিমিট সুইচটাকেও লাগাতে হবে।
*চতুর্থ এবং সর্বশেষ ধাপঃ ট্রে দুইপশে সামান করে রেখে মোটরের চেন উঠাতে হবে, লক্ষ রাখতে হবে দুইদিকে চেনটা যেনো সমান থাকে, সর্বশেষে লিমিট সুইচ ভায়া হয়ে কন্ট্রোলারের সাথে টার্নিং মোটরের সহযোগ দিয়ে সার্কিট চালু করতে হবে।
ডিম ফুটার তিনদিন আগে পর্যন্ত ডিম ঘুরাতে হয়, শেষের তিন দিন ডিম ঘুরানো বন্ধ রেখে হ্যচিংএর জন্য হ্যচার ট্রেতে ডিম স্থীরভাবে শুয়ায়ে রাখা হয়, এক্ষেত্রে অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা হ্যচিংএ দেবার আগে ডিম ক্যন্ডালিং করে ঠোঁক শনাক্ত করে উপরের পাশে সেই অংশ রাখে,
★প্রথম পদ্ধতীতে ডিম ঘুরানোর নিয়মাবলিঃ
আমদের দেশে গ্রাম অঞ্চলের অনেক ছোট খামারি ভাইয়েরা হাতে ডিম ঘুরানো ইনকিউবেটরে বাচ্চা ফুটিয়ে থাকেন।
হাতে ডিম ঘুরানোর জন্য কিছু নিয়ম অনুসরন করলে ভ্রুনের সঠিক গঠন অব্যাহত থাকে, কিন্তু অনেক খামারি ভাই হাতে ডিম ঘুরানো নিয়ম জানেন না।
হাত ডিম ঘুরানোর সময় একটা বিষয় খুবই গুরুত্ব সহকারে লক্ষ্য রাখতে হয় সেটা হচ্ছে প্রতিটা ডিম সঠিক কো্ণে ঘুরছে কিনা এবং কোনো ডিম পুরো উল্টে যাচ্ছে কিনা, আর এই কাজটা সহজ করার উপায় হচ্ছে ডিম দাগ দিয়ে নেয়।
ডিমে তিনভাবে দাগ দেয়া যায়ঃ
*প্রথম, ডিম ইনকিউবেটরে দেবার সময় ডিমে দাগ দেয়া যায়।
*দ্বিতীয়, ডিম দেবার ৭থেকে ১০দিন পরে ক্যন্ডালিং করে ভ্রুনের অবস্থান চিহ্নিত করে দাগ দেয়া।
*তৃতীয়, প্রথমে দাগ দিয়ে নিয়ে ক্যন্ডালিংএর পরে ভ্রুনের অবস্থান চিহ্নিত করে পুনরায় দাগ দেয়া।
এক্ষেত্রে তিনটা পদ্ধতীই কার্যকারি তবে এই দাগ দেবার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ডিম সঠিক কো্ণে ঘুরানো যাতে ভ্রুনের গঠন স্বাভাবিক হয়।
তাই প্রথমে দাগ দেয়া এবং ৭থেকে১০দিন পরে ক্যান্ডালিং করে চুড়ান্তভাবে দাগ দেয়া টাই বেশি কার্যকারি।
এতে যেসকল ডিমে ভ্রুনের অবস্থান সনাক্ত করতে সমস্যা হয় সেই ডিম গুলোতে প্রথম দাগ দেয়াকেই সঠিক বলে ধরে নেয়া যায় ।
ডিমে দাগ দেবার মূল উদ্দেশ্য ডিম যেনো ভুলে বিপরিত দিকে ঘুরে না যায়,তাই ডিমে ভ্রুন চিহ্নিত মাঝামাঝি দাগ দেবার পারে সেই দাগ থেকে এক ইঞ্চি ডান বাম পাশ্বে আরো দুইটা দাগ দেয়া।
এবং দুইপাশের দাগ গুলো এদিক ওদিক নিচে রেখে ডিমকে সমান ভাবেই ঘুরানোর কাজ সঠিক রাখা হয়।