গাম্বোরুঃইচ্ছে থাকলেও কেন কন্টোল এবং টিকার সিডিউল করা কঠিন।বিস্তারিত
বাংলাদেশে পোল্ট্রিতে সবচেয়ে বেশি যে রোগটি হয় তা হল গাম্বোরু / আই বি ডি।সব খামারির কাছেই পরিচিত ।এটাকে কন্টোল করা খামারির পক্ষে কঠিন কারণ অনেক কিছুই খামারির হাতে নেই।যেমন এই রোগের জন্য হ্যাচারি,টিকার সিডিউল,টিকার কোয়ালিটি/ধরণ এবং জীবানূর ধরণ দায়ী।।১৯৬২ সালে আমেরিকায় গাম্বোরু(ডেলাওয়ার) নামক জেলায় প্রথম এই রোগ দেখা যায় তাই এর নাম হয় গাম্বোরু,বিজ্ঞানী কসগ্রোভ এটি আবিস্কার করেন।ভারতে দেখা যায় ১৯৭১ সালে।এমন ফার্ম খোজে পাওয়া কঠিন যেখানে গাম্বোরু হয়নি।কারন হল ভাইরাসটি সব পরিবেশে টিকে থাকতে পারে,পি এইচ ২-১২ এবং তাপমাত্রা ৬০ ডিগ্রি তে ৩০ মিনিট বেচে থাকে,জীবানূনাশকও ভাল কাজ করেনা এবং টিকার সিডিউলও টিকার কার্যকারিতা না হওয়ার কারণ।বাংলাদেশে ১৯৯২ সালে গাম্বোরু ১ম দেখা যায় এবং তা ভারত ও নেপাল থেকে বাচ্চার মাধ্যমে দেশে এসেছে বলে মনে করা হয়।বর্তমানে ব্রিডারে এমন উন্নয়ন হয়েছে যাতে মৃ্ত্যরহার কম হয় কারণ মাতার কাছ থেকে এখন অনেক এন্টিবডি নিয়ে আসছে।গাম্বোরু রোগ ফিড ও বাচ্চা কোম্পানীর জন্য আশির্বাদ কারণ মর্টালিটির জন্য বাচ্চা বিক্রির ধারাবাহিকতা বজায় থাকে,বছরে প্রায় ১৫-২০ লাখ ব্রয়লারের মর্টালিটি হয় গাম্বোরুর জন্য।
১৯৬২ সালে Winterfield embryonating egg এ ১ম আই বি ডি এজেন্ট আইসোলেট করেন।১৯৭০ সালে Hitchner আই বি ডি্র প্যাথোগ্নোমোনিক (Pathognomonic) লেসন আবিস্কার করেন।সুস্থ হবার পর বার্ড ক্যারিয়ার হিসাবে কাজ করেনা।তবে সপ্তাহখানেক ভাইরাস সেডিং করে।
এপিডিমিওলজিঃ
এজেন্ট
কারনঃ এটি বিরনাবিরিডি ফ্যামিলির আই বি ডি ভাইরাস,জেনাস ভিরনা ভাইরাস দিয়ে হয়।এটি ননএনভেলভ আর এন এ ভাইরাস।এই ভাইরাস লিটারে ও ফার্মে ১২০দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকে।এটি হাইলি কন্টাজিয়াস ও(একিউট) তীব্র রোগ। এই তীব্রতার জন্যই হঠাত করে অনেক মুরগি ৩-৪তমদিনে মারা যায়।রোগের সুপ্তিকাল(ইনকোবেশন পিরিয়ড ২-৩ দিন( ইনফেকশন হবার পর থেকে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাবার মাঝের সময়টুকুকে ইনকিউবেশন পিরিয়ড বলে) ।ইঙ্কিউবেশন পিরিয়ড যত বেশি হয় রোগের পিরিয়ড তত বেশি মানে বেশি দিন ধরে রোগটি ফার্মে থাকে তবে কিছু ব্যতিক্রম আছে।
স্ট্রেইন ঃ
২ধরণের
টাইপ ১ প্যাথোজেনি্ক
টাইপ ২ নন প্যাথোজেনিক(টার্কিতে পাওয়া গেছে)
টাইপ ১ প্যাথোজেনি্ক এর ৬টি রিলেটেড বা পারশিয়ালী রিলেটেড স্ট্রেইন আছে।
সাইজ ৫৫-৬৫ ন্যানোমিটার।
যেমন১। ক্লাসিকেল( ক্লিনিকেল বা স্ট্যান্ডাড স্টেইন ) এবং ২।ভ্যারিয়েন্ট স্টেইন।
ক্লাসিকেল স্ট্রেইন হলে বার্সা বড় এবং রক্তক্ষরণ হবে ও মারা যায়।
১৯৭০ সালের দিকে ক্লাসিকেল আই বি ডি কে মাইল্ড স্টেইন টিকা দিয়ে দমন করা হত কারণ সে সময় মাতা হতে প্রদত্ত এন্টিবডি কম ছিল।ভেরিয়েন্ট স্ট্রেইনের ক্ষেত্রে বার্সা ১-২দিনের মধ্যে ছোট হয়ে যায় কিন্তু রক্তক্ষরণ হয়না এবং মারা যায়না,একে সাবক্লিনিকেল বলা হয়।এটি প্রথম দিকে ছিল না,পরে তৈরি হয় এবং ব্যাপক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।সাবক্লিনিকেলে আই বি ডিতে পার্মানেন্ট ইমোনোসাপ্রেশন হয় যার ফলে সেকেন্ডারী ইনফেকশোন হয় বিশেষ করে শ্বাসনালীতে ।আমাদের দেশে ভি ভি আই বি ডি,ভি আই বি ডি এবং মাইল্ড আই বি ডি দেখা যায়।১৯৮০ সালের দিকে ভেরিয়েন্ট তৈরি হয় এবং আগের মাইল্ড টিকা আর কাজ করেনা।এই ভেরিয়েন্ট স্ট্রেইন কে দমন করা হয় ইন্টারমেডিয়েট এবং ভেরিয়েন্ট স্ট্রেইনের সংবলিত টিকা দিয়ে।
ভেরী ভিরুলেন্ট আই বি ডি দেখা যায় ১৯৮৭ সাল থেকে।ভি ভি আই বি ডি যাতে প্রচুর মৃত্যু হয়,একে দমন কর হয় ইন্টারমেডিয়েট প্লাস স্টেইন দিয়ে।এখন ক্লাসিক এবং ভেরিয়েন্ট স্ট্রেইন এক সাথে করে টিকা তৈরি করা হচ্ছে।
টিকা সিডিউল তৈরির সময় খেয়াল রাখতে হবে যে টিকা দেয়া হবে তা যেন সেডে বিদ্যমান ভাইরাসের চেয়ে কম মারাত্মক হয়,বেশি মারাত্মক হলে পরে সে নিজেই রোগ তৈরি করবে যা আর টিকা দিয়ে দমন করা কঠিন হয়।এখন এমন টীকা তৈরি হচ্ছে যা মাতা হতে প্রাপ্ত এন্টিবডি থাকা অবস্থায় কাজ করে।অনেক ডিসইনফক্ট্যান্ট এবং পরিবেশের ফ্যাক্টরের প্রতি এই ভাইরাসটি রেজিস্ট্যান্ট তবে ফর্মালিন,গ্লোটারেল্ডিহাইড,ক্লোরিণ,আয়োডিন এবং ০.৫% সোডিয়াম হাইডোক্সাইডে এই জীবানূ মারা যায়।রানিক্ষেত ভাইরাসকে মারার জন্য ইথানল,পটাশ এবং ফর্মালিন,ক্রিসল ভাল কাজ করে।
আই বি ডি ভাইরাস পি এইচ ২-১২ মধ্যে ও টিকে থাকে যার ফলে এটাকে কন্টোল করা কঠিন।কিন্তু এন ডির ক্ষেত্রে পি এইচ বেশি হলে ভাইরাস মারা যায় তাই ফার্মে চুন দেয়া হয়।আক্রান্ত ফার্মে কয়েক মাস বেচে থাকে,পানিতে,খাবারে ও পায়খানায় কয়েক সপ্তাহ টিকে থাকে।রানিক্ষেত আক্রান্ত ফার্মে রানিক্ষেত ভাইরাস ১০০-২০০দিন বেচে থাকে।
কিভাবে ছড়ায়ঃ
আক্রান্ত মুরগির পায়খানার মাধ্যমে জীবানূ বের হয়ে আসে এবং তা খাদ্য ,লিটার,পানিকে দূষিত করে এবং তা সুস্থ মুরগিকে আক্রান্ত করে।সুস্থ হবার পর ও ১০-১৪দিন ভাইরাস ছড়াতে পারে।
বাতাস,নিম্ম মানের এবং মেয়াদ উত্তীর্ণ টিকা।
খামারের যন্ত্রপাতি।মশা
লিটার,পোকামাকড়
আক্রান্ত মুরগি।ডিমের ট্রে ও খাচা
হোস্ট
ব্রয়লার,লেয়ার,সোনালী মদেশী মুরগি আক্রান্ত হয়।কোয়েল,হাস,কবুতর,টার্কিতে তেমন হয় না হলেও মর্টালিটি হয় না।তবে অনেকে কোয়েল এবং টার্কিতে ভ্যাক্সিন দিয়ে থাকে।একবার এই জীবানূ সেডে প্রবেশ করলে পরবর্তীতে অন্য ব্যাচে ও গাম্বোরু হওয়ার সম্বাবনা বেড়ে যায়।তাছাড়া চিকিৎসা খরচও বেড়ে যায়।ব্রয়লারে ৩ সপ্তাহ থেকে -বিক্রির আগ পর্যন্ত হতে পারে, ১৭-১৮ দিন থেকেও দেখা যায়,কোন কোন সময় এর আগেও কেউ কেউ পেয়েছে।লেয়ারের ক্ষেত্রে ৩-৫ সপ্তাহে বেশি হয়,তবে সাদা মুরগিতে ১৬ সপ্তাহ এবং লাল মুরগিতে ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত হয়।সাদা জাতের মুরগি বেশি সেনসিটিভ।বয়স বাড়ার সাথে সাথে বার্সা ছোট হয়ে যায় এবং ১০০-১২০ দিন পর বার্সা প্রায় বিলীন হয়ে যায় ফলে পরে আর দেখা যায়না।
বার্সার সাইজ
৭দিনে ৭মিলি ১৪দিনে ১৪মিলি
২১দিনে ২০মিলি
সোনালীতে ১০ দিনেও দেখা যায়।কারণ এদের ম্যাটারনাল ইমোনিটি কম থাকে।১ম ২দিন মৃত্যহার আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে এবং ৩-৪ দিন পর লক্ষণ ভাল বোঝা যায় এবং বেশি মারা যায়।৫-৭ দিনের মাঝে মুরগি সুস্থ হয়ে যায়।আক্রান্তের হার ১০০% হতে পারে,মৃত্যহার ১-৫০% তবে ৭০%-৮০% ও হতে পারে তা নির্ভর করে স্ট্রেইন,মুগির বয়স,অন্য রোগ ও পরিবেশের উপর।সাথে রানিক্ষেত হলে মৃত্যহার ১০০% হয়।মর্বিডিটি যত বেশি হবে মর্টালিটি তত কম হবে।যেমন এইচ ৫ এন ১ এর মর্বিডিটি তেমন নাই অথচ মর্টালিটি ১০০% হতে পারে।আবার করাইজার মর্বিডিটি ২০-১০০% অথচ মর্টালিটি তেমন নাই।
অর্থনৈতিক গুরুত্বঃ
৩ সপ্তাহের বেশি বয়সের মুরগিতে তীব্র আকারে হলে অনেক মারা যায়।৩ সপ্তাহের কম বয়সের মুরগিতে সাবক্লিনিকেল হলে লক্ষণ তেমন দেখা যায় না কিন্তু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।এফ সি আর বেড়ে যায় এবং ওজন ভাল আসে না।থাইমাস এবং বার্সাতে প্রদাহ করে ফলে ইমোনিটি কমে যায় এবং অন্য রোগ যেমন রানিক্ষেত,আমাশয়,মেরেক্স ও কলিব্যাসিলোসিস,আই বি এইচ,চিকেন ইনফেশাস এনিমিয়া হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়।গাম্বোরুর জন্য ফার্মে মাইকোপ্লাজমা ও সালমোনেলার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়।বছরে প্রায় ১৫-২০লাখ ব্রয়লার গাম্বোরুর জন্য মারা যায়।
পরিবেশ
সারা বছর সব পরিবেশেই হয় মানে শীত ও গরম ২ পরিবেশেই টিকে থাকে এবং রোগ তৈরি করে।।এটি যে কোন পরিবেশে বেঁচে থাকে এবং সব জীবানূনাশক দিয়ে ভাইরাস মারা যায় না।আক্রান্ত ফার্মে কয়েক মাস বেঁচে থাকে এবং খাদ্য,পানি এবং পায়খানায় কয়েক সপ্তাহ বেচে থাকে।
প্যাথোজেনেসিসঃ
IBD virus Enter through 0r0 and nasal route then Viremia go to bursa.৩ সপ্তাহের নিচে সাবক্লিনিকেল রুপে থাকে কারণ এন্টিবডি,এন্টিজেন,কমপ্লিমেন্টের ঘাটতি থাকে।আর ৩ সপ্তাহের বেশি হলে
১। AB+Ag+complement produced localized immmunologic injury> arthus type of reaction > Necrosis,haemorrhages> destruction of B cells>immunosuppression>suboptimal response of vaccine>Lowered resistance to diseases.
এটি বার্সা ও থাইমাস কে নস্ট(নেক্রোসিস) করে দেয় ফলে ইমোনিটি কমে যায়।নরমালী ৩-৪ মাস পর বার্সা ও থাইমাস নিঃশেষ হতে থাকে।কিন্তু বোন ম্যারো,স্প্লিন ও GALT,BALT,CALT থেকে লিম্পোসাইট তৈরি হয়।আই বি ডি হলে ইমোনিটি তৈরি বন্ধ হয়ে যাবার কারণে আই বি,রানিক্ষেত ও মারেক্স ভ্যাক্সিন দেয়ার পর ও কাজ হয় না ।অনেক সময় দেখা গেছে গাম্বোরু থেকে সেরে উঠার পর রানিক্ষেত,কক্সিডিওসিস,সালম্মোনেলোসিস,কলিব্যাসিলোসিস হয়ে থাকে।
২।ব্লাড ক্লোটিং ফ্যাক্টরের ঘাটতি হয় ফলে হেমোরেজ হয়।.ভাইরাসটির টার্গেট সাইট হল বি লিম্ফোসাইট।প্রচুর জ্বর থাকায় ক্যালসিয়ামের শোষণ কম হয় তাছাড়া ক্যালসিয়াম বের হয়ে যায় যা সাদা কালার।তাই পায়খানা সাদা/চুনা হয়।তাছাড়া কিডনি আক্রান্ত হয়ে ইউরেট জমা হয় যা সাদা কালার।
বার্সার পরিণতি
৩য় দিনে বার্সা বড় হতে থাকে,৪র্থ দিনে সাইজ ও ওজন ডাবল হয়।৫ম দিনে নরমাল সাইজে চলে আসে।৬তম দিনে ছোট হতে থাকে,৮দিনে পূর্বের নরমালের ১/৩ হয় মানে নরমাল সাইজ থেকে ছোট হয়ে যায়।।
লক্ষনঃ
১।ক্লিনিকেল ফাইন্ডিং (লক্ষণ) নির্ভর করে স্ট্রেইন,ভাইরাসে পরিমাণ্,বয়স ও ম্যাটার্নাল এন্টিবডির উপর।.২।রোগ সংক্রমণের ২-৩দিনের মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ পায়,৩-৫দিনের মধ্যে যা মারা যাবার তা মারা যায়।৩।প্রথম দিকে মুরগি তার পাছায় ঠোকরায় এবং সেখানে বিষ্টা লেগে থাকে।৪।চুন চুন পায়খানা করে যদি কিডনি আক্রান্ত হয়।৫।পালক উস্কো খুস্কো হবে।৬।বসে থাকে ,হাটাচলা করতে চায় না।খায় না
৭।পানির মত ঘন ঘন পায়খানা করে।(কিডনি জনিত সমস্যার কারণে) ৮।ডিহাইড্রেশন হয়ে শক করে মারা যায়।
৯।খাবার ও পানি কমে যায় ১০।গ্রোথ হয়না এবং ওজন কমে যায়।.
১১।ঝিমায়,চোখ বন্ধ করে রাখে এবং অরুচিতে ভুগে। ১২।তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং শরীর কাপতে থাকে।
১৩।আক্রান্ত মুরগি মাথা সামনের দিকে নুয়িয়ে রাখে। ১৪।এক সাথে জমা হয়ে থাকে।
১৫।৩য় দিন থেকে মারা যায়,৫-৭দিনের মধ্যে ভাল হয়ে যায়। ১৬।বার্সার ব্যথার কারণে খাদ্যের মধ্যে মুখ ঢুকিয়ে রেখে চোখ বন্ধ করে ঝিমায়।দেহে চলাফেরা করার মত শক্তি থাকেনা।
১৭।মৃত্যুর কিছু আগে অনেক মুরগি হঠাত পড়ে গিয়ে পা দুটো এদিক ওদিক ছোড়া ছোড়ি করে মারা যায়। ১৮।নিজের মলদার ঠোকরায় এবং লিটারের উপর উপুর হয়ে শুয়ে ঠেট দিয়ে রাখে।
১৯।তীব্র আক্রমনে দেহের ভিতরে রক্তক্ষরন ও ডায়রিয়া জনিত কারণে পানিশূন্যতায় শক করে মারা যায়।২০।সাবক্লিনিকেল অবস্থায় বার্সা ছোট হয়ে যায় এবং রক্ত ক্ষরণ হয়না।এটি আই বি ডি ভ্যারিয়েন্ট স্টেইনের কারণে হয়।
পোস্টমর্টেমঃ
নরমালি বার্সা দেখতে মটরশুটির মত,ওজনের ০.৩% হয়।প্রথম দিকে এটা ফোলে যায় এবং শেষের দিকে ছোট হয়ে যায় স্বাভাবিকের চেয়ে ১/৩ অংশ।৩ দিন থেকে বার্সা ফুলে যায়,৬দিন থেকে বার্সা ছোট হতে থাকে এবং ৮-১০ দিন হলে বার্সায় কেসিয়াস কোর পাওয়া যায়।স্বাভাবিক অবস্থায় বার্সা ক্রিম কালার এবং আক্রান্ত হলে হলুদ থেকে ধুসর কালার হয়।বার্সার ভিতর রক্ত এবং অনেক সময় সাদা পানির মত বস্তু দেখা যায়।জেলাটিনাস জাতীয় বস্তু দেখা যায়।bursa enlarged or atrophied,haemorrhagic,mucus,gelatinous exudate or cheesy mass.
কিডনিতে ইউরেট জমা হওয়ার কা্রণে কিডনি ফুলে যায়।বুক,পিকোরিয়াল মাসল এবং রানের মাংসে বিন্দু বিন্দু রক্ত দেখা যায় কারণ এই ভাইরাস রক্ত জমাট বাধতে বাধা দেয়।(Bilateral Haemorrhage)ডিওডেনামে মিউকাস দেখা যায়।লিভার স্ফীত এবং রংগিন মারবেলের মত দেখায়।গি্জার্ডের সেরাস এবং প্রভেন্টিকোলাসের জাংশনের মিউকাস পর্দায় রক্ত ক্ষরণ হয়।
ডিফারেন্সিয়াল ডায়াগ্নোসিসঃ
রানিক্ষেত,মেরেক্স,ডিহাইড্রেশন,আই বি এইচ,,সালফার ড্রাগ টক্সিসিটি /হেমোরেজিক সিন্ড্ম,,পেল বার্ড সিনড্রম(ই এর ঘাটতি),আফলাটক্সিকোসিস
রোগ নির্ণয়ের পদ্ধতিঃ
হিস্ট্রি
লক্ষণ
পোস্ট মর্টেম
রেপিড টেস্ট
ইলাইজা
প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রনঃ
৪টি বিষয় খেয়াল করতে হয়
ক।ব্রিডারে সঠিক তথ্য(৬-৮ সপ্তাহে লাইভ ও ১৭-১৮ সপ্তাহে কিল্ড এর পর ৪-৫ মাস পর আইবিডি +রিও+এন ডি +আইবি টিকা দিতে হবে)
খ।বায়োসিকিউরিটি
গ।ব্রয়লারে সঠিক টিকাদান কর্মসূচী ও ভ্যাক্সিন কোম্পানীর নির্দেশনা
ঘ।ম্যাটার্নাল এন্টিবডি ও ফিল্ডে ভাইরাসের স্ট্রেইন
ব্রয়লারের এম ডি এ ১৮০০-২২০০ আর লেয়ারের ৩২০০-৩৬০০
ব্রেক থ্রু টাইটার কিঃসর্বোচ্চ এম ডি এ টাইটার।বাচ্চার বডীতে যে মাত্রায় যে মাত্রায় থাকলে ভ্যাক্সিন টী সফলতার সাথে এম ডী একে কে অতিক্রম করতে পারে।লো ব্রেক টাইটার এর চেয়ে হাই ব্রেক থ্রো টাইটার টাইটার দ্রুত এম ডি এ কে ব্রেক করে আর্লি ভ্যাক্সিনেশনের নিশ্বয়তা দেয়।
ভ্যাক্সিন ফেইলারের অন্যতম কারণ ভাইরাসের এন্টিজেনিক ভেরিয়েশন
ক ।ব্রিডারে টিকা
ব্রিডারে যদি সঠিক টিকা সিডিউল মেনে চলা হয় তাহলে মাতার শরীরের উচ্চ মাত্রায় এন্টিবডি তৈরি যাকে ম্যাটারনাল এন্টিবডি বলে তা ভাল থাকবে এবং বাচ্চাতে তা বজায় থাকবে।ম্যাটারনাল এন্টিবডির হাফ লাইফ ৪দিন যা ২১ দিনে শেষ হয়ে যায়।টাইটার উঠতে ৪-৫দিন লাগে।
ধরি ৩দিন বয়সে টাইটার পাওয়া গেল ১২০০০ তাহলে ৪দিনে অর্ধেক হলে ৩+৪ঃ৭দিনে হবে ৬০০০।
আবার ৪দিন পর মানে ৪+৭ঃ১১দিনে টাইটার হবে ৩০০০,১১+৪ঃ১৫দিনে হবে ১৫০০,১৯দিনে হবে ৭৫০।
আর ভ্যক্সিন দেয়ার উপযুক্ত সময় হলো যখন টাইটার ৭৫০-১০০০ হবে।্তবে ইন্টার্মেডিয়েট প্লাসের ক্ষেত্রে ম্যাট্রার্নাল এন্টিবডি কিছু থাকলেও সমস্যা হয় না কিন্তু ইন্টার্মেডিয়েট ভ্যাক্সিন এন্টিবডি থাকা অবস্থায় দেয়া যাবে না যদি কোম্পানির নির্দেশনা না থাকে।
অনেক ক্ষেত্রে তার আগে শেষ হয়ে যায় যদি ম্যাটারনাল এন্টিবডি কম হয়।
রেপিড টেস্ট করেও টিকা দেয়া যায় ১ম টিকা দেয়ার ৫দিন পর আবার ২য় টিকা দেয়ার ৫দিন টেস্ট করতে হবে যদি টেস্টে পজিটিভ আসে তাহলে আবার টিকা দিতে হবে।আর যদি নেগেটিভ আসে তাহলে বুঝতে হবে গাম্বোরু হবে না মানে টিকা কাজ করেছে।
সঠিক পদ্ধতিঃ
যদি ম্যাটার্নাল এন্টিবডি জানা থাকে তাহলে এন্টিবডি হিসাব করে দিতে হবে ইন্টারমেডিয়েট ভ্যাক্সিন
আর যদি ম্যাটার্নাল এন্টিবডি জানা না থাকে তাহলে দিতে হবে ইন্টার্মেডিয়েট প্লাস ভ্যাক্সিন তবে সব সময় এই টিকা দিলে এলাকায় আই বি ডির প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাবে।তাই বাচ্চা কোম্পানি থেকে জানতে হবে বা বাচ্চা কোম্পানীকে নিজ দায়িত্বে জানাতে হবে তাদের বাচ্চায় ম্যাটার্নাল এন্টিবডি কত আছে।
জানা না থাকলে যদি ইন্টারমেডিয়েট ভ্যাক্সিন দেয়া হয় তাহলে ম্যাটারনাল এন্টিবডি নিউট্রালাইজ হয়ে গাম্বোরু হয়ে যাবে।
হট ভ্যাক্সিন গুলো ম্যাটারনাল এন্টিবডি জানা না থাকলে দেয়া যাবে তবে এই ভ্যাক্সিনের কারণে অনেক স্টেস পড়ে,বার্সা ছোট হয়ে যায়।ইমোনিটি কমে যায়।অন্যান্য ডিজিজ চলে আ্সতে পারে।
খ।বায়োসিকিউরিটিঃ
৩৫ দিন সেডের ভিতর বাহিরের কেউ প্রবেশ করতে পারবেনা,একাধিক সেড থাকলে আলাদা আলাদা জুতা এবং পোশাক রাখতে হবে।ফুটবাথ ব্যবহার করতে হবে।এক সেড থেকে অন্য সেডে যাওয়া যাবেনা।
lesser meal worm(গোবরের পোকা,মশা ও ইদুর দূরে রাখতে হবে।বাচ্চা উঠানোর আগে সেড পরিস্কার,জীবাণুমুক্ত এবং ফিউমিগেশন করতে হবে।.০.2-০.৫% সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইড বা আয়োডিন দ্রবন ব্যবহার করতে হবে।মুরগির খাবার ও পানির পাত্র ৫% ফর্মালিন দিয়ে পরিস্কার করতে হবে।মেঝে,দেয়াল এবং খাচা ডিটারজেন্ট দিয়ে পরিস্কার করতে হবে।সবগুলো বিষয় কমার্শিয়াল ফার্মে মেনে চলা সম্বল না তাই ত সমস্যা লেগেই থাকে তবে ব্রিডার ফার্মে অনেকেই মেনে চলে।
গ।ব্রয়লারের ক্ষেত্রেঃ(এম ডি এ )( ম্যাটারনাল এন্টিবডি)
ম্যাটার্নাল এন্টিবডি হলো ইয়ক স্যাকের মাধ্যমে বাচ্চাতে যে এন্টবডি স্থানান্তরিত হয়।এই ম্যাটার্নাল এন্টিবড প্যাসিভ ইমোনিটি তৈরি করে ফলে ফ্লক আক্রান্ত হবার সম্বাবনা কম থাকে।এই ম্যাটার্নাল এন্টিবডি ইন্টারফেরেন্স তৈরি করে ফলে প্রয়োগকৃত ভ্যাক্সিন ভাইরাস সহজে কাজ করতে পারেনা যদি উচ্চমাত্রায় ম্যাটার্নাল এন্টিবডি থাকে।
ম্যাটার্নাল এন্টিবডি থাকা অবস্থায় টিকা দিলে গাম্বোরো হবার সম্বাবনা বেড়ে যাবে।
ম্যাটার্নাল এন্টিবডি এবং হাফ লাইফঃ৩দিন বয়সে বাচ্চার ম্যাটার্নাল এন্টিবডি মাপা উচিত,এই সময় সর্বোচ্চ মাত্রায় ম্যাটার্নাল এন্টিবডি পাওয়া যায়।এই সময় যে ম্যাটার্নাল এন্টিবডি পাওয়া যায় তার হাফ লাইফ ৪ দিন (ব্রয়লার) লেয়ারের ৪.৫ দিন।
তাই ৪-৫দিন পর পর হাফ লাইফ অর্ধেক হয়।যদি একটি ফ্লকের এন্টিবডির হাফ লাইফ গড় ৮৫০০ ইউনিট এবং ৪দিন পর পর অর্ধেক হবে এবং এক সময় শেষ হয়ে যাবে।ফলে ফিল্ড ভাইরাস দ্বারা ফ্লক আক্রান্ত হবে।
ম্যাটারনাল এন্টিবডি দেখে টিকার সিডিউল তৈরি করা উচিত কিন্তু আমাদের দেশে এখন তা তেমন প্রচলন হয় নি।তাছাড়া একেক কোম্পানির টিকার সিডিউল একেক রকম এবং বাচ্চার মান ও বিভিন্ন রকম,ইউনিফর্মিটিও ভাল না ।
ভি ভি আই বি ডি হলে ইন্টারমিডিয়েট প্লাস দেয়া উচিত।
যেসব বাচ্চার উচ্চ এবং সুষম এম ডি এ সেসব ক্ষেত্রে ১৪-১৬ দিনে ১টি টিকা দিলেই হবে।
যেসব বাচ্চার এম ডি এ সুষম না সে ক্ষেত্রে ২টি টিকা দিতে হবে।
১মটি ৭-১০ দিনে(ইন্টারমেডিয়েট,হেটারোজেনেসিটি ঠিক করার জন্য)
২য়টি ১৪-১৭ দিনে ( ইন্টারমেডিয়েট প্লাস,সব মুরগির প্রটেকশন দেয়ার জন্য)
গাম্বোরু হবার ৫-৭দিন আগে টিকা দিতে হবে।যদি ১৮দিনে গাম্বোরু হয় তাহলে টিকা দিতে হবে ১২-১৩দিনে।
টিকা বিভিন্ন ধরণের হয় যেমন
মাইল্ড টিকা ঃএই টিকা এখন চলে না।
ইন্টারমেডিয়েট( ডি ৭৮)
ইন্টারমেডিয়েট প্লাস( ২২৮,আই বি ডি ব্লেন,আই বি ডি এক্সট্রিম )
হট টিকা(উইন্টার ফিল্ড) আই বি ডি এল,ট্রান্স মিউন আই বি ডি,বার্সাপ্লেক্স)
ভেরি ভিরুলেন্ট আই বি ডির জন্য এমন ইন্টারমেডিয়েট প্লাস ভ্যাক্সিন দিতে হবে যার ইমোনোজেনেসিটি,ব্রেক থ্রু টাইটার এবং বার্সার উপর প্রভাব ভাল হতে হবে।
তাই সে সব ক্ষেত্রে আর্লি ভ্যাক্সিনেশন,এম ডি এ কে ভাংগার শক্ত এবিলিটি এবং নিউট্রালাইজীং এন্টীবডির অপটিমাম লেভেল।
লেয়ারের ক্ষেত্রে
১ম অপশন
উন্নত বাচ্চার ক্ষেত্রে ১৯ দিনে,ইন্টারমেডিয়েট প্লাস।
নিম্ন মানের বাচ্চার ক্ষেত্রে (বিশেষ করে সোনালী) ৬-৭ দিনে ইন্টারমেডিয়েট এবং ১৩-১৪ দিনে ২য় টিকা,ইন্টারমেডিয়েট প্লাস।
অনেকে ইন্টার মেডিয়েটের সাথে কিল্ড দেয়,ইন্টারমেডিয়েট প্লাস কে বাদ দেয়া হয় কিছু খারাপ প্রভাবের জন্য যাতে ভ্যাক্সিনের ধকল কমানো যায়।
২য় অপশনঃ
উচ্চ মানের বাচ্চার ক্ষেত্রে
৫-৭ দিনে ১ম টিকা ইন্টারমেডিয়েট সাথে কিল্ড
২২-২৮ দিনে ২য় টিকা
নিম্নমানের বাচ্চার ক্ষেত্রে
৫-৭ দিনে ১ম টিকা ইন্টারমেডিয়েট সাথে কিল্ড
১৮-২৪ দিনে ২য় টিকা
ভ্যাক্সিন সিডিউল কেমন হবে তা নির্ভর এলাকার রোগের প্রাদুর্ভাব,রোগের তীব্রতা,ভাইরাসের স্ট্রেইন এবং ব্রিডারের টিকা,বাচ্চার মান,কোম্পানীর ভ্যাক্সিন টেকনোলজি ও টাইটারের উপর।
গাম্বোরু টিকা পানিতে/মুখে দেয়া ভাল কারণ তার টার্গেট অংগ হল জি আই ট্রাকের লিম্ফয়েড।
চিকিৎসা
সেকেন্ডারি ইনফেকশনের জন্য এন্টিবায়োটিক যেমন সিপ্রো,লেভোফ্লোক্সসিলিন
ইমোনোস্টিমোলেটর(লাইসোভিট,নিউট্রিলেক,বিটামিউন।)
পি এইচ বা ভিনেগার।জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল
ডিহাইড্রেশনের জন্য ইলেক্টোলিয়াট দেয়া যায়।খাবার এবং পানি কম খেলে চিনি বা গুড় ৫০ গ্রাম ১ লি পানিতে
সালফার ড্রাগ/জেন্টামাইসিন দেয়া যাবেনা।সেডের তাপমাত্রা বাড়ানো উচিত।
কিডনিতে সমস্যা হলে কিডনিটনিক।ভিটামিন কে,সি এবং ই -সেল দেয়া যায়।
আমাশয় ও সাল্মোনেলা হওয়ার সম্বাবনা থাকে তাই ই এস বি৩ বা কক্সিকিউর বা কক্সি কে দেয়া ভাল।৪-৫ দিন খাবারে বা পানিতে প্রোটিন কম রাখতে পারলে ভাল।এতে কিডনিজনিত সমস্যা কম হয়।