গবাদিপশু পালন খাতটির উন্নয়নের জন্য প্রাণী সম্পদ বিভাগ এবং খামারীরা কি ধরনের ভূমিকা পালন করতে পারেন।
—————————————————
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এতগুলি বছর কেটে গেল অথচ এই দেশের গবাদিপশু পালন খাতটির ততটা উন্নয়ন হয়নি যতটা হওয়া উচিৎ ছিল। কিন্তু বর্তমান সময়ে গবাদিপশু পালন শিল্পে একটা জোয়াড় এসেছে যেটা আসলেই লক্ষ্য করার মত এবং এই জোয়াড়ে যাতে ভাঁটা না পরে সেটা ধরে রাখাই সরকার তথা প্রাণী সম্পদ বিভাগ এবং খামারী ভাইদের জন্য এখন জরুরী হয়ে পরেছে। আশির দশক থেকে এদেশে গবাদিপশু মূলতঃ গরুর জাত উন্নয়নে কৃত্রিম প্রজননের ব্যবহার শুরু হয় এবং নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত সেটা কিছুটা ধীর পায়ে কিন্তু সঠিক ভাবেই এগুচ্ছিল। এরপর এতে চলে আসে বিশৃঙ্খলা। উলটা পালটা জাত উন্নয়নের মাধ্যমে এদেশে সংকর জাতের গরু সৃষ্টির ধারাটাই বদলে গেল,প্রাণী সম্পদ বিভাগও অনেকটা হাল ছেড়ে দিয়ে তাদের কাজ গতানুগতিক ভাবে করে যেতে লাগলো,যদিও প্রাণী সম্পদ বিভাগের উদ্দেশ্য ও প্রজনন নীতিমালা সবসময়ই ঠিক ছিল বলে আমার কাছে মনে হয়। হয়তো প্রজনন নীতিমালাকে কিছুটা আধুনিকায়ন এবং পরিবর্ধিত রূপ দেয়া যেত ঐ সময়টাতে! কিন্তু বর্তমানে সরকারের প্রাণী সম্পদ বিভাগের সদিচ্ছা এবং কিছু ভালো পদক্ষেপ এবং এই খাতে অনেক শিক্ষিত জনগোষ্ঠী এগিয়ে আসার কারণে গবাদিপশু পালন খাতটিতে একটা আমূল পরিবর্তন এসেছে। এখন শুধু এটাকে ধরে রাখাটাই সরকারের প্রাণী সম্পদ বিভাগ এবং খামারী ভাইয়েদের মূল কাজ। আগে খামারীরা কোন গাভীকে কৃত্রিম প্রজনন করালে এ,আই কর্মীর কাছ থেকে শুধু এতটুকু নিশ্চিত হতেন, একটা লাল নাভীওয়ালা বড় বাচ্চা হবে কিনা! কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। এখন খামারীদের অনেকেই যেই বীজ ব্যবহার করা হবে সেই বীজের অধিকারী ষাঁড়ের ইতিহাস,জাত,ব্লাডলাইন এসব জানতে চায়! কারণ, উৎপাদিত বাছুর যদি বক্না হয় তবে সেটা ভালো দুধের গাভী হবে কিনা তা নিশ্চিত করতে চায় আর বাছুর যদি ষাঁড় হয় তবে সেটা বড় জাতের হবে কিনা তাও নিশ্চিত করতে চায় সবাই । আসলে খামারীদের মনোভাব এমনটাই হওয়া উচিৎ। আর বেসরকারি যত সিমেন বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান আছে তাদের এ,আই কর্মীদের দক্ষতা এবং সিমেনের মান এবং সেই সিমেন সরকারি প্রজনন নীতিমালায় অনুমোদিত কিনা সেটা সরকারি প্রাণী সম্পদ বিভাগকেই কঠোর নজড়দারির মাধ্যমে অবশ্যই নিশ্চিত করা উচিৎ। নাহলে বিশাল বিপর্যয় নেমে আসতে পারে ভবিষ্যতে! ভ্যাক্সিন বা টিকার সহজলভ্যতা,খামারীদের গবাদিপশুর যথেষ্ট চিকিৎসা সুবিধা পাওয়া নিশ্চিত করা প্রাণী সম্পদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রদেয় সেবা গুলির মধ্যে অন্যতম হওয়া উচিৎ। খামারী ভাইয়েরা কিছু বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারেন এই খাতটিকে টিকিয়ে রাখার জন্য। অঞ্চল ভিত্তিক কিছু খামারী এক হয়ে গোখাদ্য প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র,দুধ বিক্রয় কেন্দ্র ,ছোট দুগ্ধজাত পণ্য তৈরীর কারখানা,গরু ছাগলের মাংস বিক্রয়ের জন্য নিজস্ব বিক্রয়কেন্দ্র এসব গড়ে তুলতে পারেন। অনেকে হয়তো বলবেন এই সব বলা সহজ করা কঠিন। আমিও স্বীকার করি এটা। কিন্তু টিকে থাকার জন্য আমাদের এসব করতেই হবে।অস্তিত্বের প্রশ্ন এটা! বিকল্প গবাদিপশুর খাদ্যের দিকে খামারীদের নজড় দেওয়ার সময় এসেছে বর্তমানে। গবাদিপশুর খাদ্য উপাদান গুলির পুষ্টিমান কোনটাতে কতটুকু এটা খামারী ভাইয়েদের অবশ্যই বুঝতে হবে,তাহলে টি,এম,আর বা রেশন তারা নিজেরাই তৈরী করতে পারবেন তাদের গবাদিপশুর জন্যে। আর সরকারের প্রাণী সম্পদ বিভাগ থেকে কিভাবে সর্বোচ্চ সহযোগীতা নেয়া যায় তা সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মচারী এবং কর্মকর্তাদের সাথে বন্ধুসূলভ আচরণের মাধ্যমেই নিশ্চিত করতে হবে। অনেক কথাই তুলে ধরলাম একজন অতি সাধারণ খামারী হিসাবে নিজের দৃষ্টিকোণ থেকে। অনেকের সাথে আমার দৃষ্টিভঙ্গির মিল নাও হতে পারে! অনেক বিষয় হয়তো আমি উল্লেখ করিনি! আসলে আমার মাথায় এই মুহুর্তে যা এসেছে তাই লিখেছি। স্বাধীনতার পর অনেকগুলি বছর কেটে গেলো,কিন্তু সেই অর্থে এদেশে গবাদিপশু পালন খাতটির উল্লেখ করার মতো তেমন উন্নয়ন ঘটেনি! এখন সময় হয়েছে ঘুরে দাড়াঁবার, দশকে এবং দেশকে কিছু দেওয়ার!!!
মুক্তি মাহমুদ(পি ডি এফ)