Breaking News

আনসোল্ড/অবিক্রীত বাচ্চা না কিনার কারণ

আনসোল্ড (অবিক্রিত) বাচ্চা কিনবেন না- নিজের ক্ষতি করবেন না।

পর্ব- ১

অবিক্রিত বাচ্চার লক্ষণ

 হক জয়েন্ট বা হাঁটু লাল হয়ে যায়।
কিসের লক্ষন?
১. বাচ্চা যখন হ্যাচারে ( শেষ তিন দিন ছিল) তখন হ্যাচার মেশিনে আদ্রতা যেমন থাকার কথা ছিল তেমন ছিল না, কম।ছিল এবং হ্যাচার মেশিনের বায়ু চলাচল ঠিকমত ছিল না।
২. হ্যাচারে তাপমাত্রা অনেক বেশী ছিল যা থাকার কথা তার চেয়ে উপরে।
৩. বাচ্চা ফুটার পর প্যাকেটে বাচ্চা অনেক সময় ছিল
৪. পরিবহনে অনেক সময় লেগেছে।
৫. বাচ্চা পরিবহনে আবহাওয়ায় তাপমাত্রা অনেক বেশী ছিল।
৬. চিক বক্সের তলা প্লেন/সমান ছিল।
৭. বাচ্চা অনেক পরে খামারীর হাতে পৌঁছে ছিল।

কি সমস্যা হবে এমন বাচ্চা কিনলে-

১. বাচ্চা ডিহাইড্রেশানে ভোগার কারনে অনেক দূর্বল হয়ে যাবে।
২ নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে না, এক দিকে কাত হয়ে পড়ে যাবে।
৩. খাদ্য পানি খেতে পারবে না, যেহেতু হাঁটতে পারবে না।
৪. বাচ্চার শীত শীত লাগবে, যেহেতু খেতে পারবে না তাই নিজের শরীর থেকে তাপ ও উৎপাদন হবে না- এবং ব্রুডারের নীচে জড় হয়ে থাকবে। এক সময় পুষ্টি হীনতায় ভুগবে।
৫. অধিক হারে মৃত্যু হবে।
৬. যেগুলো বেঁচে থাকবে বিভিন্ন সাইজের হয়ে যাবে।
৭. এই বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কম হবে।
৮. সব সময় রোগ ব্যাধি লেগেই থাকবে।
৯. অনেক খাদ্য খাওয়া সত্বেও ভাল ওজন আসবে না।

পর্ব- ২

একটি সুস্থ সবল তরতজা সদা চঞ্চল বাচ্চা, চোখ কি উজ্জ্বল!
ফ্যাকাশে রঙ, পানি শুন্যতায় ভোগার কারনে এমন হয়েছে।
এই বাচ্চার পা এমন কালার এবং সাথে খসখসে হল ফুটে বের হওয়ার অনেক ঘন্টা পরেও পানি পান করতে পারেনি, ফলে পানি শুন্যতা দেখা দিয়েছে।
পানি শূন্যতায় ভূগতে থাকা বাচ্চার ওজন ক্রমাগত কমতে থাকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে খামারে পৌঁছে পানি পান করতে না পারলে দেখা যায় ৪৭-৫০ গ্রাম ওজনের একটা বাচ্চা ৩৫-৪০ গ্রাম হয়ে যায়।
প্রথম দিন যদি একটা বাচ্চার ওজন ৫ গ্রাম কম থাকে তাহলে ২৮-৩০ দিন বয়সে বিক্রির সময় যে বাচ্চার ওজন ৫ গ্রাম বেশি ছিল তার থেকে ৮০-৯০ গ্রাম ওজন কম হয় ( পর্যবেক্ষণ)
এই পর্যবেক্ষণ সুস্থ সবল বাচ্চার ক্ষেত্রে যদি হয় তাহলে একটি পানি শুন্যতায় ভোগা বাসি আনসোল্ড বাচ্চা যা ফুটে বের হওয়ার ৪৮-৫০ ঘন্টা পরে আপনার খামারে পৌঁছালো এবং ইতিমধ্যে ১০-১৫ গ্রাম ওয়েট লস হয়ে গেল তার অবস্থা কি দাঁড়াবে এবং কি ওজন আসবে তা একজন পুরাতন দক্ষ খামারী ভাই সহজে অনুমান করতে পারবেন।
ব্যবসা আপনার, ভাল মন্দ বুঝার দায়িত্ব ও আপনার, দিন শেষে লাভ লোকসানের দায় ও কিন্তু আপনার কাঁধে আসবে।
শেষে একটা ক্যালকুলাস দিয়ে বুঝার চেষ্টা করি-
ধরেন আপনার ক্রয়কৃত বাচ্চার ওজন পানি শুন্যতা যা ফুটার ৪৮-৫০ ঘন্টা পরে আপনার খামারে আসলো- ফুটার সময় এই বাচ্চার ওজন ছিল ৫০ গ্রাম, আপনার হাতে যখন আসলো তখন ওজন ৩৫ গ্রাম – প্রতি ৫ গ্রাম ওজন কম থাকার জন্য যদি ৮০ গ্রাম ওজন কম আসে তাহলে এই বাচ্চা নরমালি প্রথম দিন ১৫ গ্রাম ওজন কম থাকার জন্য ৩০ দিন বয়সে ২৪০ গ্রাম ওজন কম আসবে-
এবার আসেন অন্য হিসাব মিলাই
যাঁরা আলসোল্ড বাচ্চা কেনায় আগ্রহী
১৷ লোভে
২। বাকিতে কেনার কারনে নিজের কোন মতামত দেওয়ার বা পছন্দের সুযোগ নেই ( কারন ইতিমধ্যে কয়েক লক্ষ বা হাজার টাকা দেনা যাঁর কাছ থেকে বাচ্চা খাদ্য কিনেন তাকে)
এই আনসোল্ড হওয়া বাচ্চা আগের দিন যদি ৪০ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে আর আজ আনসোল্ড হিসাবে ২০ টাকায় কিনেন-
তাহলে দানে কম পেলেন ২০ টাকা।
এবার আসেন এই আনসোল্ড বাচ্চা রেডি হলে, লাইভ ব্রয়লার বিক্রি করলেন ১১০ টাকা কেজি দরে – ২৪০ গ্রাম কম ওজন আসার কারনে ( শুরুতে বাচ্চার ওজন যা থাকার কথা তা থেকে ১৫ গ্রাম কম ছিল)
মোট কম দাম পেলেন ২৬.৪০ টাকা।?????????????????
বাচ্চা কত তে কিনলেন?
২০ টাকা কমে, মহা খুশি???????
অন্য হিসাব বাদ দেন
২৬.৪০-২০ = ৬.৪০ টাকা ★২০ টাকা কমে বাচ্চা কেনার পর ও ৬.৪০ টাকা আপনার নিজের সঠিক সিধান্ত নিতে ব্যর্থ হওয়ার কারনে লস দিলেন!
আর এমন বাচ্চা –
কি ভাবে যত্ন নিতে হয়, কেমন টেনশান হয়- কত মেডিসিন ভিটামিন খাওয়াতে হয়- আর কতবার ডাক্তারের কাছে যেতে হয় ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন।
সিধান্ত আপনার,আমরা কিছু তথ্য দিলাম মাত্র- আমাদের দীর্ঘ দিনের পর্যবেক্ষণের আলোকে।
বিঃদ্রঃ এমন আনসোল্ড বাচ্চাতে, ব্রয়লার বিক্রি করে লাভ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে যদি রেডি মুরগীর দাম অনেক অনেক বেশি থাকে।।

পর্ব-৩

সারা দুনিয়ায় সুনির্দিষ্ট সময়ের পর অবিক্রিত বাচ্চা মেরে ফেলা হয়, অথবা প্রোটিন প্ল্যান্টে পাঠানো হয় পোল্ট্রি মিল বানানোর জন্য।
দুই কারনে এমন করা হয়-
১. বাচ্চার মার্কেট ( দাম) স্থিতিশীল রাখার জন্য
২. বাচ্চা ফুটে বের হওয়ার ২৪ ঘন্টা বা তারো পরে বাচ্চা যদি কোন খামারীর খামারে রেয়ারিং বা পালন করা হয় তাহলে তা সেই খামারীর জন্য আর্থিক ক্ষতির কারন হয়ে দাঁড়াবে।
ব্যবসায় নীতি নৈতিকতা লাগে – যাঁদের উপর নির্ভর করে বাচ্চা উৎপাদনকারীর ব্যবসা সচল থাকে তাদের যে কোন আর্থিক ক্ষতি উৎপাদনকারীকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে- উন্নত দেশে পোল্ট্রি বিজনেসে ইন্ডাস্ট্রি ওয়েলফেয়ার ইসু অতি গুরত্বপূর্ণ।
আমাদের এখানে এত বড় পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রির ব্যপ্তি – কিন্তু সবার মধ্যে একটাই যেন উদ্দেশ্য যত তাড়াতাড়ি বিনিয়োগ লাভে আসলে উঠিয়ে আনা যায়- এটা মহাজনি কারবারে প্রযোজ্য কিন্তু যখন বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারের সমন্বয়ে একটি শিল্প তখন সেই ব্যবসার সাপ্লাই- উৎপাদন – বিপনন চেইনের মধ্যে যাঁরা আছেন তাঁদের সবার স্বার্থ দেখতে হয়- না হলে যেমন একদিকে পরস্পরের প্রতি আস্থাহীনতা আসে তেমনি দীর্ঘ মেয়াদে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসে।
বাস্তবতা বিবেচনা করলে আমাদের বাংলাদেশের পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রি সে রকম এক মহা বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে- হ্যাচারি- ফিড মিল – খামারী- আমদানিকারক কেউ সুখে নেই।
বেশি বিপর্যয়ের মধ্যে আছে ব্রিডার ও হ্যাচারি, আর তার চেয়ে মহা বিপদে আছে প্রান্তিক খামারী।
কেউ দেখার নাই-
পোল্ট্রি শুধু একটি পেশা বা ইন্ডাস্ট্রি নয়- দেশের মানুষের উন্নত পুষ্টি যোগান দাতাও বটে।
এমন যখন অবস্থা তখন – খামারিদের কাঁধে জেনে শুনে ডিহাইড্রেটেড, দূর্বল বাচ্চা গছিয়ে দিয়ে খামারীকে ঝুঁকিতে ফেলার মধ্যে কিছু সুবিধা পাওয়া লোকের আর্থিক লাভ হয় কিন্তু খামারী শেষ হয়ে যায়।
খামারী ভাইদের প্রতি অনুরোধ আনসোল্ড বাচ্চা যত কম দামেই হউক নিজের ভালর জন্য লোভ সামলাতে হবে।

Please follow and like us:

About admin

Check Also

ফার্মের যে বিষয়গুলি সংশোধনের সুযোগ নাই তাই আগেই ঠিক করে শুরু করতে হবে।

ফার্মের যে বিষয়গুলি সংশোধনের সুযোগ নাই তাই আগেই করা উচিত।। ক।ফার্মের যে সমস্যা যা কোন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »