Breaking News

পি সি আর আবিষ্কারের কাহিনী

পি সি আর আবিষ্কারের কাহিনী

মলিক্যুলার বায়োলজিস্টদের কাছে পি সি আর (PCR) বা পলিমারেজ চেইন রিএ্যকশন একটি অতি পরিচিত নাম। এটি হলো ডি এন এ (DNA) অণুকে বহুগুণে বর্ধিত করার একটি সহজ পদ্ধতি। পিসিআর পদ্ধতিটি গত তিন দশকের বেশি সময় ধরে মলিক্যুলার বায়োলজির বিভিন্ন পরীক্ষায় বহুলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমান যুগে পিসিআর ছাড়া কোন ডি এন এ ল্যাব কল্পনা করা যায় না। ডি এন এ নিয়ে গবেষণা করার কাজটি সহজ করে দিয়েছে পি সি আর।
.
পি সি আর পদ্ধতিটি আবিষ্কার করেছিলেন ক্যারি মালিস (Kary Mullis) নামে একজন প্রাণরসায়নবিদ। প্রথাগত অর্থে তিনি কোন বিশাল বিজ্ঞানী ছিলেন না। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন কিছুটা বাউন্ডুলে প্রকৃতির । ‌ চাকরি করতেন ক্যালিফোর্নিয়ার একটি বায়োটেক কোম্পানির‌‌ ডি এন এ কেমিস্ট হিসেবে। তাঁর কাজ ছিল বিভিন্ন অণুজীব থেকে ডি এন এ স্যাম্পল সংগ্রহ করার পর সেগুলোকে বর্ধিত করে বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করা। কাজটা ছিল খুবই সময়সাপেক্ষ এবং বিরক্তিকর।
.
ক্যারি ভাবলেন কিভাবে কাজটা সহজে করা যায়। ‌ এ নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে গিয়ে পি সি আর এর আইডিয়াটি তাঁর মাথায় হঠাৎ করেই এসেছিল। সময়টা ছিল ১৯৮৩ সাল। ক্যারি তখন হলিডে করছেন তাঁর বান্ধবীর সাথে। একদিন হাইওয়েতে গাড়ি চালাতে চালাতে তাঁর মাথায় আইডিয়াটা এলো। বিজ্ঞানীরা একেই বলেন, “দি ইউরেকা মোমেন্ট”। ক্যারি গাড়ি থামিয়ে তাঁর বান্ধবীকে বললেন, ডিএনএ নিয়ে আমি একটি বিরাট সমস্যার সমাধান করে ফেলেছি।
.
ব্যাপারটা খুলেই বলি। ডি এন এ হলো জীবজগতের বংশগতির ধারক এবং বাহক। ডি এন এ অণুর একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি নিজের মত হুবহু আরেকটি ডি এন‌ এ অণু তৈরি করতে পারে। এই প্রক্রিয়াটিকে বলে ডিএনএ রেপ্লিকেশন। ‌ প্রকৃতিতে এই প্রক্রিয়াটি কয়েকটি এনজাইমের সাহায্যে ধাপে ধাপে সম্পন্ন হয়। ‌ সেজন্য ল্যাবরেটরীতে এই প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াটি অনুসরণ করা ছিলো ব্যয় সাপেক্ষ এবং কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
.
ক্যারি ভেবে দেখলেন হেলিকেইজ (helicase) এনজাইম ছাড়াও শুধুমাত্র তাপমাত্রা বাড়িয়েই ডিএনএ রেপ্লিকেশনের প্রাথমিক ধাপটির সূচনা করা সম্ভব। কিন্তু সমস্যা হলো ওই তাপমাত্রায় রেপ্লিকেশনের মূল এনজাইম, যার নাম হলো ডিএনএ পলিমারেজ, নষ্ট হয়ে যায়। তিনি সমস্যাটির সমাধান করার জন্য ট্যাক পলিমারেজ (Taq polymerase) নামে এক বিশেষ ধরনের এনজাইমের শরণাপন্ন হলেন। ‌এই এনজাইমটি উচ্চ তাপমাত্রায় নষ্ট হয় না, বরং স্বাভাবিক ডিএনএ পলিমারেজের মতই কাজ করে। ট্যাক পলিমারেজ এনজাইমটির উৎস হলো উষ্ণ প্রস্রবণের মাঝে বসবাসকারী এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া। এর নাম হল Thermus aquaticus, সংক্ষেপে Taq, উচ্চ তাপমাত্রার মধ্যেও এই ব্যাকটেরিয়াগুলো বেঁচে থাকে।
.
ক্যারি টেস্টটিউবের ভেতর টার্গেট ডিএনএ, প্রাইমার, ডিএনএ নিউক্লিওটাইড, এবং ট্যাক ডিএনএ পলিমারেজ এসব উপাদান একত্রে মিশিয়ে বাফার সলিউশনে রাখলেন। তারপর টেস্টটিউবের তাপমাত্রা একবার বাড়িয়ে, তারপর কমিয়ে এবং আবার বাড়িয়ে দেখলেন এভাবে ডিএনএ রেপ্লিকেশন করা সম্ভব। এই তাপমাত্রা বাড়ানো এবং কমানোর প্রক্রিয়াটি কয়েকবার করার পর তিনি দেখলেন তার টার্গেট ডিএনএ বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে, অথচ সময় লেগেছে খুবই কম। এই পদ্ধতিটির নাম তিনি দিয়েছিলেন পলিমারেজ চেইন রিএ্যকশন‌ বা পিসিআর। তিনি পদ্ধতিটি আবিষ্কার করলেও, কোম্পানির সাথে তাঁর চুক্তি অনুযায়ী তিনি এটি তাঁর নিজের নামে পেটেন্ট করতে পারেননি। পেটেন্ট হয়েছিলো তাঁর কোম্পানির নামে। তবে তাঁর কাজে খুশি হয়ে কোম্পানি তাকে দশ হাজার ডলার বোনাস দিয়েছিলো। এর কিছুদিন পর তাঁর কোম্পানি ওই পেটেন্টটি অন্য একটি কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দিয়েছিলো, মাত্র ৩০০ মিলিয়ন ডলারে! যার একটি কানাকড়িও ক্যারিকে দেওয়া হয়নি। ক্যারি খুবই হতাশ হয়েছিলেন তাঁর কোম্পানির ব্যবহারে।
.
কিন্তু নোবেল কমিটি তাকে হতাশ করেননি, তাঁর এই আবিষ্কারটি জন্য ১৯৯৩ সালে রসায়নশাস্ত্রে তিনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। তার চেয়েও বড় পুরস্কার হলো তাঁর এই যুগান্তকারী আবিষ্কারটি এখন মলিক্যুলার বায়োলজির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে গেছে।

©Tanvir Hossain Sir
(Collected)

Please follow and like us:

About admin

Check Also

টাইটারের জন্যএইচ এ এবং এইচ আই টেস্ট কিভাবে করতে হয়,১% আর বি সি কিভাবে বানাতে হয়(শর্ট টেকনিক সহ)

টাইটারের জন্যএইচ এ এবং এইচ আই টেস্ট কিভাবে করতে হয়,১% আর বি সি কিভাবে বানাতে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »