Breaking News

দুধে ব্যাকটেরিয়া  ———————ডাঃ সুখেন্দু শেখর গায়েন(14/05/19)

দুধে ব্যাকটেরিয়া
———————ডাঃ সুখেন্দু শেখর গায়েন(14/05/19)

ছোট খোকার মস্ত রাগ আজ,কহে মাকে গিয়া,
নিয়া যাও দুধের গ্লাস,
উহাতে ব্যাকটেরিয়া ,শুধু ব্যাকটেরিয়া !
ফেসবুক বা কাগজ পড় না মা,জানবে কি করিয়া,
দুধে হাজার ব্যাকটেরিয়া ,মরবো নাকি খাইয়া ?

খোকার রাগারাগি দেখে,
দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে শান্ত করলাম তাকে।
জিজ্ঞেস করলাম, খোকা ,পুকুরের পানি খাও?
না ফুটালে কক্ষনো না ,টাইফয়েড, কলেরা,জন্ডিস-
অনেক রোগই হইতে পারে ,তুমিই তো বাপী কও।
ঠিক বলছে খোকা,
দুধের ক্ষেত্রেও ওই একই কথা,
ফুটালে বা পাস্তুরাইজড করলে
ক্ষতিকর জীবাণু নিয়ে থাকেনা কোন মাথা ব্যথা।
জুতা আবিষ্কার নিশ্চয়ই খোকা পড়,
থাকুক যতই ধূলাবালি, জুতা পরা ছাড়ো?

পুকুরের পানিতে জীবানু থাকবে, কি আর কথা কঠিন,
খোলা জায়গা,পাড়ে মানুষ পশুর পায়খানা,
এর থেকে কী বলা সমীচীন ?
দুধের মাঝে ব্যাকটেরিয়ায় ভরা,
উপকারী কতকগুলি, কেউবা ভয়ংকরা!
হাজার ক্ষমতা রাখুক,
পানির মত দুধ ফুটিয়ে খেলে ,কি পারে তা করুক!
দুধে যদি জীবানু না র’ত,
পাস্তুরাইজেশনের কি দরকার, মিছেই খরচ,
চেষ্টা অবিরত।

দেহের উপকারী ব্যাকটেরিয়া গরুর দুধে আছে,
Lactobacillus delbruckii, Lactobacillus acidophilus
বললাম তোমার কাছে।
Lactobacillus helveticus, Bifidobacterium bifidum,
Lactococcus lactis এ সবই উপকারী ব্যাকটেরিয়ার নাম।
Lactobacillus acidophilus , Bifidobacterium ,
কোলেস্টেরল মাত্রা কমিয়ে রাখে এক গবেষণায় দেখিলাম।
Lactobacillus acidophilus রোধ করে কোলেস্টেরল শোষণ,
শোষণ করে ফোলেট,বিটুয়েলভ ,আরো শোষে আয়রণ।
গ্যাস্ট্রিক আলসার উপশম করে ,ক্ষত সারতে পারে,
প্রদাহ কমায়,লিভার ফাংশন বাড়ায়,রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
অন্ত্রেরCandia,Aspergillus ও অন্য ছত্রাক,
এরাই আবার রোধ করে খোকা, তোমার জানা থাক।
ফুসফুসে যদি হয় pneumococcal ইনফেকশন ,
ওই ব্যাকটেরিয়ারা-ই সহায়তা দেয় রুখতে ওদের সংক্রমণ ।
Influenza virus (H1N1)এর আক্রমণেও ফুসফুস ভাল রাখে,
Bifidobacterium bifidum-এ আইবিএস( irritative bowel syndrome)
উপশমে থাকে।

ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দুধে কেন আসে?
পায়খানা ও প্রস্রাবের দ্বার তো ওলানের আশেপাশে ।
Enterobacteriaceae পরিবারের ব্যাকটেরিয়া ,
প্রাণীর অন্ত্র থেকে বাইরে আসে পায়খানা দ্বার দিয়া,
Cow dung বা গোবর থেকে এইসব জীবাণুরা,
ওলান ও বাঁটে ছড়িয়ে গিয়ে দুধে যায় ত্বরা।
গরুর প্রস্রাবের সাথেও থাকে অনেক ব্যাকটেরিয়া,
প্রস্রাব থেকে বাঁটে গিয়ে দুধে যায় চলিয়া।
ম্যাস্টাইটিস বা ওলান প্রদাহ দুগ্ধবতীর হলে,
ওলান প্রদাহের জীবানুরা দুধে আসে চলে।
সুপ্ত আছে ম্যাস্টাইটিস রোগ,বাহ্যিক (এখনো) লক্ষণ নেই,
যেসব জীবানু করবে এ রোগ , দুধে ওরা আসবেই।

ম্যাস্টাইটিসের জীবাণু যারা দুধে চলে আসে,
Streptococcus agalactiae, S dysgalactiae আরো দলে আছে।
Pseudomonas aeruginosa,Staphylococus aureus,
Staphylococcus epidermidis বলবো অনেককে আজ।
Streptococcus uberis, Brucella melitensis,
Mycoplasma spp,E coli, Corynebacterium bovis.
Klebsiella pneumoniae বা Klebsiella oxytoca,
Enterobacter aerogenes, Pasteurella সম্ভব (দুধে) থাকা।
Trueperella pyogenes ও proteus (spp) দুধে যায়,
Prototheca zopfii ও prototheca wickerhamii থাকে (কাঁচা) দুধটায়।

Enterobacteriaecae পরিবারের অন্ত্রের ব্যাকেটিয়া,
মলের সাথে বেরিয়ে এসে (অপরিছন্নতার সুযোগে) পৌঁছায় দুধে গিয়া।
গ্রাম নেগেটিভ এসব ব্যাকটেরিয়া বেশ ক্ষতিকর,
অপরিস্কারে দুধ দোয়ালে আসবেই দুধের ভেতর।
E coli ,Salmonella, Shigella তারা,
Yersinia(pestis), klebsiella,Enterobacter এরা।
Proteus,serratia, citrobacter,
অন্ত্র থেকে যাচ্ছে দুধে, অবাক হবে কি আর?
গোবরে থাকে ব্যাকটেরিয়া, নাম তার Bacillus (spp),
Corynebacterim (spp.)ও থাকে জানো খোকা আজ।
Lactobacillus প্রজাতিরা গোবরেও থাকে,
গোবর থেকেVirus, Protozoa, yeast দুধে বসে জেঁকে।

গাভীর প্রস্রাবেও ব্যাকটেরিয়া, খোকা জেনে রাখো,
অপরিস্কারে দুধ দোয়ালে দুধে পেয়ে থাকো।
Staphylococcus aureus এবং E coli.
Bacillus subtilis ও pseudomonas fragi,
Sreptococcus agalactiae, proteus vulgaris,
প্রস্রাব থেকে দুধে যায়, কাঁচা দুধ ব্যাকটেরিয়ায় rich (বেশি)।

মারাত্মক কিছু জীবানু কাঁচা দুধে(Raw milk)থাকে,
Brucella,Bacillus (cereus)Salmonella,E coli বলে যাকে।
Listeria (monocytogenes), Campylobacter(jejuni),Cryptosporidium,
ফুটালে বা পাস্তুরাইজড করলে ঘুচে যায় বদনাম।
Yersinia enterocoliticaও থাকতে “র”- এ পারে,
কমবেশি এরা ক্ষতিকর ,জেনে রাখ ভাল করে।
ময়লা হাতে (বা ময়লা পাত্রে)দুধ দোয়ালে দুধে ব্যাকটেরিয়া,
মাটির বিছানায় শুইলে গরু দুধে যায় টিট (বাঁট)দিয়া।
ময়লা পানি দিয়ে যদি আডার ধোয়া হয়,
দুধের ভেতর দোহন কালে জীবাণু চলে যায় ।
টিটে ক্ষত সে পথ দিয়ে জীবাণুও যায়,
ম্যাস্টাইটিসও ওইসব কারণে দুগ্ধবতীর হয়।
ম্যাস্টাইটিসের জীবাণুরা দুধে ঘোরে ফেরে,
কি কারণে বলার কি আর প্রয়োজন আছে ওরে।
জীবাণু মাটিতে আছে, আছে গোবরে ও প্রস্রাবে,
একটু হেলায় মেশে দুধে ,কেন হইচই হবে ?

টোটাল সোমাটিক সেল(blood cell) সংখ্যা দুধে জেনে রাখ্ ,
প্রতি এমএল র’দুধে(কাঁচা)থাকবে সাড়ে সাত লাখ (সর্বোচ্চ সীমা)।
টোটাল ব্যাকটেরিয়া থাকবে সর্বাধিক ত্রিশ হাজার,
প্রতি এম এল কাঁচা দুধে ,এর বেশি (গ্রহনযোগ্য )নয় আর।
বিশ হাজার ব্যাকটেরিয়া থাকবে পাস্তুরাইজড হলে,
মোটেই দশের বেশি নয় ,পাস্তুরাইজড-এ কলিফর্ম র’লে।
কোন ব্যক্তির অপাস্তুরাইজড দুধে ব্যাকটেরিয়া( সর্বোচ্চ )এক লাখ ,
সর্বোচ্চ তিন লাখ Commingled milk-এ (বিভিন্ন ফার্মের মিশ্রিত দুধ)
তোমার জানা থাক।
দুধে ব্যাকটেরিয়ার গুজব শুনে দুধ ছাড়া ঠিক নয়,
দুধে মেধা বাড়ে,স্মৃতি বাড়ে,দেহ পুষ্টি পায়।।

Please follow and like us:

About admin

Check Also

দুধের ল্যাক্টোফেরিন

ল্যাক্টোফেরিন হলো একটি আয়রন সমৃদ্ধ প্রোটিন। সর্বপ্রথম ১৯৩৯ সালে গরুর দুধে এই প্রোটিনের সন্ধান মেলে। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »