Breaking News

ঘোড়ার বিভিন্ন রোগ

ঘোড়ার রোগ:

১। এজোচুরিয়া বা Tying up:
যথারীতি খাওয়া চালিয়ে একটি নির্দিষ্ট সময় আলস্য ও কাজবিহীন অবস্থায় কাটিয়ে হঠাত কাজে লাগানোর পরে এইরোগ দেখা দেয়। মায়োগ্লোবিনইউরিয়া ও মাসকুলার ডিজেনারেশন এই রোগের প্রধান বৈশিষ্ট্য।

#রোগের কারণ সমূহ
ক) খাদ্য ও অনুশীলন।
খ) প্রশিক্ষণে হঠাত পরিবর্তন।
গ) বংশগতি (Genetic Factors)
ঘ) থাইরয়েড হরমোনের কার্যক্রম হ্রাস।
ঙ) পূর্ববর্তী রোগের ইতিহাস।
চ) অন্যান্য – ইলেকট্রোলাইটস-এর অসামঞ্জস্যতা।

#যে সব দেশে ঘোড়ার বহুল ব্যবহার রয়েছে সেখানে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে (শনি ও রবিবার) ঘোড়াকে পর্যাপ্ত খাবার দিয়ে বিশ্রামে রাখা হয়। কর্মবিহীন থাকা অবস্থায় বেশি খেয়ে প্রচুর গ্লাইকোজেন ঘোড়ার মাংসপেশীতে জমা হয়। সাপ্তাহিক ছুটির পরদিন (সোমবার) যখন হঠাত করে ওই ঘোড়াকে কাজে লাগানো হয়, তখনই এই জমে থাকা গ্লাইকোজেন রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় ল্যাকটিক এসিডে পরিণত হয়। এই অতিরিক্ত ল্যাকটিক এসিড মাংসপেশীর নেক্রোসিস ঘটিয়ে মায়োগ্লোবিন (Myoglobin) বের করে দেয়, যা রক্তে মিশে পরে kidney র মাধ্যমে প্রস্রাবের সাথে বেরিয়ে যায় যা ঘন লাল রঙের হয়। এজন্য একে Black water disease ও বলা হয়। সাধারণত ছুটির পরদিন দেখা দেয় বলে রোগটি Monday Sickness disease নামেও পরিচিত।

#লক্ষণসমূহ
* প্রচুর ঘাম হয়।
* চলনভঙ্গিতে আড়ষ্ঠতা থাকে।
* লাম্বার ও গ্লুটিয়াল পেশীতে প্রচন্ড ব্যথা হয়।
* শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি পায়।
* পেছনের পা শক্ত হয়ে যায় এবং কাঁপতে থাকে।
* মারাত্মক অবস্থায় ঘোড়া শুয়ে পড়ে এবং আর উঠে দাঁড়াতে পারে না। পেশীর প্রোটিন মায়োগ্লোবিন রক্তস্রোতে চলে যায়। ফলে গাঢ় বাদামী/লাল প্রস্রাব হয়।
* মায়োগ্লোবিনিউরিক নেফ্রোসিস ও ইউরেমিয়ার কারণে আক্রান্ত ঘোড়া মারা যায়।

#রোগ নির্ণয়

* জৈবরাসায়নিক পরীক্ষা
* আক্রান্ত ঘোড়ার সিরাম বর্ণহীন হয়।
* ECG এবং Serum Creatine phosphokinase (SCPK) এর অস্বাভাবিকতা নির্ণয় করে পেশী বিনষ্ট হওয়ার মাত্রা নির্ধারণ করা যায়।

#চিকিতসাঃ
*রেজিঃভেটেরিনারি ডাক্তার দেখান।
* উপসর্গ দেখা দেয়া মাত্রই ঘোড়াকে কাজ থেকে বিরত রাখতে হবে।
*Fluid /ফ্লুইড বা পানি জাতীয় খাবার বেশী বেশী দেওয়া।
* কর্টিকোস্টেরয়েডস জাতীয় ইনজেকশন
* আক্রান্ত স্থানে গরম শেক(warm application)প্রদান করলে কষ্ট লাঘব হয়।

#প্রতিরোধ
* ঘোড়াকে বিশ্রামের সময় দানাদার খাদ্য কর্ম দিবসের থেকে অর্ধেক পরিমাণে দিতে হবে।
* বিশ্রামের পর ঘোড়াকে প্রথমে অল্প মাত্রার ব্যায়ামের পর ধীরে ধীরে কাজের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে।

 

# Dr NI Manik

ঘোড়ার রোগ:

#স্ট্র্যাংগলস /Strangless বা Equine distemper:

স্ট্র্যাংগলস ঘোড়ার একটি তীব্র সংক্রামক ব্যাধি। ঊর্দ্ধশ্বাসনালীর (URT) প্রদাহ এবং পুঁজযুক্ত লসিকাগ্রন্থির (Lymphnodes) পুঁজ এ রোগের প্রধান বৈশিষ্ট্য। এই রোগ ঘোড়ার চোয়ালের হাড়ের সাথে অবস্থিত লসিকাগ্রন্থিকে বড় করে ফেলে। ফলে শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হয় (Strangled breathing)। পুঁজ মিশ্রিত লসিকাগ্রন্থি এবং গলায় প্রদাহ শ্বাস-প্রশ্বাসে বাধা সৃষ্টি করে, তাই এই রোগকে স্ট্র্যাংগলস বলে।

#রোগের কারণঃ
স্ট্রেপটোকক্কাস ইকুই (Streptococcus equi) দ্বারা হয়।

# ৬ মাসের নিচে এবং বয়স্ক ঘোড়া এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। অপ্রাপ্ত বয়স্ক ঘোড়ার ইমিউনিটি কম তাই এরা বেশি সংবেদনশীল।
#ঠান্ডা আবহাওয়া, অপর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এই রোগ বিস্তারের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
#ঘোড়া ছাড়া গাধা ও খচ্চরেরও স্ট্র্যাংগলস হতে পারে।

#রোগের প্রভাবকসমূহঃ
* অপুষ্টি
* অতিরিক্ত ঘোড়ার সংখ্যা
* পূর্ববর্তী রোগের অস্তিত্ব
* দূরবর্তী স্থানান্তর

#যেভাবে ছড়ায়ঃ
* আক্রান্ত ঘোড়ার নাকের নিঃসরণ ও পুঁজের মাধ্যমে সুস্থ ঘোড়াতে ছড়ায়।
* মুখোমুখি সংস্পর্শে, দূষিত খাবার পাত্র, পানির পাত্র, হাত, গ্রুমিং, টুলস্ ইত্যাদির মাধ্যমে ছড়ায়।
* স্ট্রেপটোকক্কাস ইকুই (Streptcoccus equi) সরাসরি মুখ দ্বারা গ্রহণ করার মাধ্যমে ছড়ায়।
* মাছি ও বিভিন্ন কীটপতঙ্গের মাধ্যমে ছড়ায়।
* দূষিত বিছানাপত্র পরিবহনের গাড়ি, চারণভূমির মাধ্যমে ছড়ায়।

#রোগের সুপ্তাবস্থাঃ
এরোগের সুপ্তিকাল ৪-৮ দিন। সাধারণত আক্রান্তের হার ১০-১০০% এবং মৃত্যুহার ১-২%। আক্রান্ত হওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ পায়।

#লক্ষণসমূহঃ
*দৈহিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় (স্বাভাবিক ৯৯.৬-১০০.৮০ ফাঃ)।
* অরুচিভাব।
* অস্থিরতা।
* নাক দিয়ে তরল পদার্থ বের হয়।
* লসিকাগ্রন্থি ফুলে যায় এবং প্রচন্ড ব্যথা হয়।
* লসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়ার কারণে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।
* ফোড়া কখনো কখনো গলা থেকে মস্তিষ্ক, যকৃত ও ফুসফুসে ছড়িয়ে পড়ে। এই ধরনের সংক্রমণকে Bastard Strangles বলে।
* এ রোগের স্থায়িত্ব ২০-২৫ দিন।

#রোগ নির্ণয়ঃ
* নাক ও লসিকাগ্রন্থির নিঃসৃত পুঁজ(Streptococcus equi).
* (CFT)

#চিকিতসাঃ
*Vet Doctor দেখান যতদ্রুত সম্ভব।
* Penicillin drug (i.u.)(i/m)
* OTC

#প্রতিরোধঃ
* জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
* পালে নতুন ঘোড়া আসলে তাকে পৃথকভাবে রাখতে হবে।
* থাকার জায়গা (Stalls), খাদ্য ও পানির পাত্র এবং অন্যান্য সরঞ্জাম সবসময় জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে।
* বাণিজ্যিকভাবে এ রোগের ভ্যাকসিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়। প্রথম বার ভ্যাকসিন দেয়ার ৩ সপ্তাহ পর বুস্টার ডোজ দিতে হবে এবং ৬ সপ্তাহে দ্বিতীয় বুস্টার ডোজ দিতে হবে (প্রথম ভ্যাকসিনের দিন থেকে গণনা করে)। ভ্যাকসিনের কার্যকাল ৬-১২ মাস।

#বিশেষ পরামর্শঃ
আক্রান্ত ঘোড়াকে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে কম্বল জড়িয়ে রাখতে হবে। নরম রুচিকর খাবার সরবরাহ করতে হবে। প্রয়োজনে নাক পরিষ্কার করে গরম পানির ভাপ প্রয়োগ করতে হবে। এমনকি প্রয়োজনে ফোঁড়াযুক্ত লসিকাগ্রন্থি অপারেশন করতে হবে।

#NI_Manik
#vet_visitors

#Vet_visitors

Please follow and like us:

About admin

Check Also

বিলুপ্তপ্রায় পাঁচটি প্রাণী- রাজশকুন, ঘড়িয়াল, মিঠাপানির কুমির, নীলগাই এবং শুশুক

বর্তমান সময়ে জীববৈচিত্র্য পড়েছে মহা সংকটে। ইতোমধ্যেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে তালিকাভুক্ত অসংখ্য প্রজাতির উদ্ভিদ ও …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »