হার্ট এট্যাক: ভিটামিন মিনারেলের দুষ্টচক্র
হৃৎপিণ্ড আমাদের শরীরে রক্ত পাম্প করে। রক্ত চলাচলের সময় রক্তনালীতে প্রাকৃতিক ভাবেই স্কার/ক্ষত তৈরী হয়।
এই ক্ষতগুলো সাড়ানোর জন্যে প্রয়োজন ভিটামিন সি (ভিটামিন সি কমপ্লেক্স)। সিনথেটিক ভিটামিন সি, এক্ষেত্রে ব্যর্থ হতে পারে। আমরা বর্তমানে কমকম ফ্রেস ফ্রুটস ও ভেজিটেবলস খাই, তাই শরীর ভিটামিন সি কমপ্লেক্স থেকে বঞ্চিত হয়।
ভিটামিন সি এর অনুপস্থিতিতে, যখন ক্ষতগুলো সাড়াতে দেরী হয়, তখন কোলেস্টেরল সেখানে চলে আসে, সেই ক্ষত হিল করার জন্যে। মিস্টার কোলেস্টেরল একা আসেনা, সাথে তার দোস্ত ক্যালসিয়ামকে নিয়ে আসে। এই দুইজনে মিলে ক্ষতস্থানে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দেয়। এভাবে কয়েকপরত ব্যান্ডেজ লাগলেই, রক্তনালী সরু হতে থাকে ফলশ্রুতিতে ব্লকেজ।
কোলেস্টেরল শরীরের জন্যে ক্ষতিকর নয় (রক্তে উচ্চ কোলেস্টেরল অবশ্যই কাম্য নয়)। এটি শরীরের জন্যে অত্যাবশ্যকীয়। কোলেস্টেরল সেল মেমব্রেনের একটি গুরুত্বপুর্ন উপাদান। এটি সেল মেমব্রেনকে, সেল গুলিকে একত্রে ধরে রাখার শক্তি যোগায়, ও বিভিন্ন আয়ন প্রবেশে বাধা হিসেবে কাজ করে। এছাড়া, বিভিন্ন হরমোন, ভিটামিন ডি ও বাইল এসিড (খাদ্য পরিপাকে সাহায্যকারী) তৈরিতে সহায়তা করে।
তবে উচ্চ তাপে রান্না করলে কোলেস্টেরল তার কার্যকারিতা হারায় এবং সেটার ইফেক্ট ভাইস ভারসা। যাইহোক কোলেস্টেরল বেড়ে যাবার ভয়ে আমরা উচ্চ কোলেস্টেরল সমৃদ্ধ খাবার ডিম, দুধ, খাসি, গরু, মগজ, কলিজা খাওয়া একদম ছেড়ে দেই। এতে লাভ কতটা হয়, সেটা আপনিই বিচার করুন। মূলত, “আমাদের শরীরের ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ কোলেস্টেরল তৈরি হয় লিভার বা যকৃতে সংশ্লেষণের মাধ্যমে [১]”।
তাই, ছেড়ে দেয়া নয়, বরং সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কোলেস্টেরল সমৃদ্ধ খাবারের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, “১২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বা তার চেয়ে বেশি তাপমাত্রায় এক ঘণ্টা উত্তপ্ত বা পোড়ানো হলে কোলেস্টেরল অক্সিডেশনের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক যৌগে রূপান্তরিত হয়। উপরন্তু, ২০০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করা হলে কোলেস্টেরলের গাঠনিক সংকেত পুরো ভেঙে যায় [১]”।
দুষ্টচক্রের প্রধান রোলে আছেন ক্যালসিয়াম মহাশয়। শরীরে বেশি পরিমানে ক্যালসিয়ামের প্রবেশ হলে/ক্যালসিয়ামের এবজরপশন বেশী হলেই সমস্যা হতে পারে (যেমন: ভিটামিন ডি এর উপস্থিতি ক্যালসিয়ামের এবসরপশন ২০ গুন বাড়িয়ে দেয়)। ক্যালসিয়াম ছাড়া কোলেস্টেরল একা একা কিছুই করতে পারবেনা।
ক্যালসিয়ামকে শায়েস্তা করার জন্যে দরকার ভিটামিন কে২। ভিটামিন কে২, শরীরে ক্যালসিয়াম কমানোতে সাহায্য করে। এটা ফ্যাট সলুউবল ভিটামিন। যেহেতু আমরা দুধ, ডিম, মাংস খাওয়া ছেড়ে দেই, তাই ভিটামিন কে২ এর ইনটেক বন্ধ হয়ে যায়। ম্যাগনেসিয়াম উপস্থিতিও শরীরে ক্যালসিয়ামের ব্যালান্সে সাহায্য করে।
ডেনমার্কের পানিতে প্রচুর ক্যালসিয়াম বিদ্যমান, থালাবাসন ধুলে সেখানে সাদা দাগ পড়ে যায়, পানির কেটলিতে ক্যালসিয়ামের স্তর পড়ে। পানির কেটলিতে যে পরিমাণ স্তর জমে, সেটা একরকম ভয়ংকর, নিজের শরীরে তবে কি পরিমাণ পাথর জমার কথা!! কিন্তু এমনটা হয়না, কারণ, এখানকার পানিতে উচ্চমাত্রার ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। বিভিন্ন গবেষণা ইংগিত দিয়েছে যে, পানি হতে ম্যাগনেসিয়াম সড়িয়ে নিলে হার্টের রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
ভিটামিন মিনারেলের এই দুষ্টচক্র বাদে, বয়স, ধুমপান, উচ্চরক্তচাপ, ওবেসিটি, ডায়াবেটিস, আলসেমো সহ জেনেটিক ফ্যাক্টরও হার্ট এটাকে ভুমিকা রাখে।
**এই পোষ্টটি এপ্রিল ১০, ২০১৭ তে লিখেছিলাম। এডিট করা হয়েছে এপ্রিল ৮, ২০১৯।
[১] https://www.jugantor.com/todays-paper/window/164060/
লেখকঃ ড. মোঃ নাহিদুল ইসলাম
Dr. Md Nahidul Islam
ওডেন্স, ডেনমার্ক
https://www.facebook.com/Dr.Nahidul.Islam