ভাইরাস অতি (১২ থেকে ৩০০ ন্যানোমিটার) আণুবীক্ষণিক অকোষীয় জৈব যৌগ। মাত্র ২টি উপাদন দ্বারা গঠিত- কেন্দ্রে (RNA অথবা DNA যে কোন একটি) নিউক্লিক এসিড এবং প্রোটিন আবরন। ভাইরাসে জীবের মৌলিক বৈশিষ্ট খাদ্য গ্রহণ, রেচন, শ্বসন ঘটে না। তাই বিজ্ঞানীরা ভাইরাসকে জীবানু বা অণুজীব না বলে জৈব যৌগ বলে থাকেন। ভাইরাসের ২টি বিশেষ বৈশিষ্ট আছে। ১) ইহা পোষক জীবকোষে প্রবেশ করতে পারে এবং ২) সুনির্দিষ্ট পোষক জীবকোষের নিউক্লিক এসিড তৈরির প্রক্রিয়াকে কাজে লাগিয়ে নিজের অসংখ্য রেপ্লিকা তৈরির মাধ্যমে বংশ বৃদ্ধি করতে পারে। ফলে পোষক জীবকোষের মৃত্যু ঘটে।
প্রশ্ন: ভাইরাস জীব নাকি জড়?
ভাইরাস জীব নাকি জড়? এ ব্যাপারে নবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী A. Lowff ১৯৫২ সালে বলেন, ভাইরাস জীবও নয় জড়ও নয়, জীব ও জড় বস্তুর মধ্যবর্তী একটি কিছু! ভাইরোলজীর জনক খ্যাত Stanley ১৯৬২ সালে বলেন, ভাইরাস এমনিতেই জড় বস্তুর ন্যায়। কিন্তু যে মূহূর্তে ভাইরাস কোন সজীব কোষকে আক্রামন করার সুযোগ পায় সে মূহূর্তে এতে প্রাণের সঞ্চার হয়। ১৯৭৪ সালে বিজ্ঞানী Salle বলেন, ভাইরাস রাসায়নিক অনু ও সজীব কোষের মধ্যবর্তী পযায়ের এক প্রকার বস্তু।
ভাইরাসের জড়-রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য
– ভাইরাস অকোষীয়। এদের কোষপ্রাচীর, সাইটোপ্লাজম, নিউক্লিয়াস কিছুই নাই।
– ভাইরাস প্রোটিন এবং নিউক্লিক এসিডের সমাহার মাত্র।
– এদের বিপাকীয় এনজাইম নেই, খাদ্য গ্রহণ করে না, পুষ্টি ক্রিয়াও নেই।
– ভাইরাসের দৈহিক বৃদ্ধি নেই।
– এরা স্বাধীনভাবে প্রজননক্ষম নয়।
– ভাইরাস পরিবেশের উদ্দীপনায় সাড়া দেয় না।
– ভাইরাসকে কেলাসিত, সেন্ট্রিফিউজ, ব্যাপন করা যায়।
ভাইরাসের জীবীয় বৈশিষ্ট্য
• ভাইরাসের দেহ জেনেটিক বস্তু DNA অথবা RNA এবং প্রোটিন দ্বারা গঠিত।
• ভাইরাস বাধ্যতামুলক পরজীবী। পোষক কোষে বংশ বৃদ্ধি করতে পারে।
• নতুন সৃষ্ট ভাইরাসে মাতৃ ভাইরাসের বৈশিষ্ট বজায় থাকে।
• ভাইরাস অভিযোজন ক্ষমতা আছে।
• ভাইরাস পরিব্যক্তি (Mutation) ঘটায় এবং প্রকরণ (Variation) তৈরি করে।
• ভাইরাসের বাংশগতিয় পুনঃসমন্বয় (Recombination) ঘটে।
এ কারণে ভাইরাস প্রাণ-রসায়নবিদদের কাছে জড় মাত্র আর অনুজীব বিজ্ঞানীদের কাছে জীব বটে
ভাইরাস সত্যিকার অর্থে জীব নয়। তাই নতুন ভাইরাস সৃষ্টি প্রক্রিয়াকে জীবন চক্র বলা হয় না, বলা হয় সংখ্যাবৃদ্ধি প্রক্রিয়া। ভাইরাসের সংখ্যাবৃদ্ধি ২ ভাবে ঘটে। যথা লাইটিক চক্র এবং লাইসোজেনিক চক্র।
লাইটিক চক্র: হোস্ট জীবকোষে ভাইরাসের জন্য সুনির্দিষ্ট রিসিপ্টর সাইট থাকে যেখানে ভাইরাসের আবরণের স্পর্শক তন্তুর প্রোটিনের রাসায়নিক ক্রিয়ায় দৃঢ়ভাবে সংযুক্ত হয়ে যায়। কোষের অভিযোজন প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণ ভাইরাস (কখনও কখনও শুধু ডিএনএ/আরএনএ) কোষের মধ্যে প্রবেশ করে। কোষের এনজাইম প্রোটিন আবরণকে বিগলিত করে ডিএনএকে মুক্ত করে। ডিএনএ কোষের রাইবোজম, আরএনএ, অ্যামাইনো এসিড ইত্যাদি ইচ্ছে মত গ্রহণ করে প্রথমে প্রতিলিপি ডিএনএ এবং পরে আবরণী প্রোটিন তৈরি করে। পোষক কোষের ভেতরে প্রচুর সংখ্যক ভাইরাস তৈরি হুওয়ার পর পোষক কোষের প্রাচীর বিদীর্ণ হয়ে নতুন সৃষ্ট ভাইরাস মুক্তভাবে বেরিয়ে আসে।
লাইসোজেনিক চক্র: লাইসোজেনিক চক্র শুরুটা লাইটিক চক্রের অনুরূপ। এ চক্রে ভাইরাস কম তৈরি হয় এবং কোষ প্রাচীর বিদীর্ণ না করে পোষক কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট আপত্য কোষে বাহিত হতে থাকে।
এ শতাব্দির মানুষের কয়েকটি মারাত্মক ভাইরাস:
এইডস- HIV
ডেঙ্গু- Flavi Virus
বার্ড ফ্লু- Avian Influenza H5N1
চিকুনগুনিয়া- Chikungunya
সোয়াইন ফ্লু- Influenza H1N1
সার্স- Nipah virus
জলাতঙ্ক- Rabis virus
গুটি বসন্ত- Variola virus
জল বসন্ত- Varicella-Zoster virus
ভাইরাল নিউমোনিয়া- Adeno virus
সাধারণ সর্দি- Rhino virus
হাম- Rubeola virus
পোলিও- Polio virus
ইনফ্লুয়েঞ্জা- Influenza virus
হার্পিস- Herpes virus
জণ্ডিস- Hepatitis B
পীত জ্বর- Yellow fever virus
ইবোলা- Ebola virus
ডা বায়েজিদ বাহালুল
ডি এল এস