Breaking News
ইনকিউবেটরের কিছু পেশ্নের উত্তর
ইনকিউবেটরের কিছু পেশ্নের উত্তর

প্রশ্নের উত্তর

প্রথম প্রশ্নঃ কতক্ষণ বিদ্যুৎ না থাকলে ইনকিউবেটরের ডিমের ভিতর ভ্রুন মারা যেতে পারে.?

★উত্তরঃ আসলে ডিমের ভিতরে ভ্রুনের মৃত্যুর সাথে মূল সম্পর্ক হচ্ছে তাপমাত্রার।
আমরা জানি ডিম ফুটার জন্য প্রধান ভুমিকা পালন করে সঠিক তাপমাত্রা, নির্দিষ্ট তাপমাত্রার চেয়ে কম তাপমাত্রায় ভ্রুনের মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়।
আর বৈদ্যুতিক শাক্তিকে তাপ শক্তিতে রুপান্তরিত করতে ইনকিউবেটরের ভিতর ব্যবহার করা হয় বৈদ্যুতিক হিটার,
আর ইনকিউবেটরে হিটার বাল্ব বা তাপের উৎস ই সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ খরচ করে করে। সেই জন্য বিদ্যুৎ না থাকলে সঠিক তাপমাত্রা ঠিক রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।
এখানে মূল বিষয় টা হচ্ছে বিদ্যুৎ থেকে তাপ তৈরি হচ্ছে সেই তাপমাত্রায় ডিমের ভিতর ভ্রুন বেড়ে উঠছে,
এখন ডিমের ভিতরের বাচ্চার মূল সম্পর্কটা হচ্ছে তাপমাত্রার সাথে।
সকল ডিম সমান তাপমাত্রা রাখতে এবং দীর্ঘক্ষণ ইনকিউবেটরের ভিতর তাপ আটকে রাখার জন্য তাপ কুপরিবাহী পদার্থ দিয়ে ইনকিউবেটরের বডি বানানো হয়।
ইনকিউবেটরের বডি যত বেশি তাপ কুপরিবাহী পদার্থ হবে তত বেশি সময় ইনকিউবেটরের ভিতর তাপমাত্রা আটকে থাকবে।

অর্থাৎ বিদ্যুৎ কতক্ষণ না থাকলে ভ্রুনের ক্ষতি হবে সেটা নির্ভর করে ইনকিউবেটরের বডি কতটা তাপ কুপরিবাহী পদার্থ দিয়ে বানানো হয়েছে।
স্বাভাবিক ভাবে ৩৭.৭এর নিচে দীর্ঘদিন তাপমাত্রা থাকলে বাচ্চা দেরিতে ফুটবে এবং বাচ্চা দুর্বল হবে, এবং
তাপমাত্রা ৩০ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে ভ্রুনের মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়,

২৮ডিগী সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে ভ্রুনের মৃত্যু হয়।
ইনকিউবেটরের বডি যদি বেশি তাপ কুপরিবাহী হয় তবে বিদ্যুৎ না থাকলেও একটু বেশি সময় তাপ ধরে রাখতে পারবে।
ইনকিউবেটরের ভিতরের তাপ যে কমে যায়,
সেই তাপ মূলত বাহিরের তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে কমে যায়, কারন ইকিউবেটরের ভিতরে বেশি তাপমাত্রা
থেকে বাহিরের কম তাপমাত্রার দিকে তাপ সঞ্চালন হতে থাকে,, যার ফলে ইনকিউবেটরের ভিতরের তাপমাত্রা কমতে থাকে,

ইনকিউবেটরের ভিতরে তাপমাত্রা এবং বাহিরের তাপমাত্রার মধ্যে যত বেশি পার্থক্য থাকবে, তত দ্রুত ইনকিউবেটরের ভিতরের তাপমাত্রা কমতে থাকবে,

অর্থাৎ শীতকাল অপেক্ষা গরমকালে ইনকিউবেটরের ভিতর বিদ্যুৎ ছাড়া তাপমাত্রা বেশিক্ষণ আটকে থাকবে।
সর্বশেষে আমরা যেটা বুঝলাম কত ক্ষণ বিদ্যুৎ না থাকলে ভ্রুনের ক্ষতি হবে,

সেটা নির্ভর করে বাহিরের তাপমাত্রার উপর, এবং ইনকিউবেটরের বডি কতটা তাপকুপরিবাহী পদার্থ দিয়ে বানানো সেটার উপর।
তবে বিদ্যুৎ চলে গেলে একটা থার্মোমিটার দিয়ে তাপমাত্রা মাপবেন যখন দেখবেন তাপমাত্রা ৩৭ডিঃসেঃ এর নিচে নামছে তখনই বুঝবেন ভ্রুনের ক্ষতি হচ্ছে এবং যখন দেখবেন ২৮ডিঃসেঃ এর নিচে নামছে তখন বুঝবেন ভ্রুন মারা যাচ্ছে।

*দ্বিতীয় প্রশ্নঃ আদ্রতা ৮০%এর উপরে উঠে যাচ্ছে কিছুতেই নামাতে পারছিনা, বরফ দিয়েছি কাজ হয়না, চুন চক সব কিছুই দিয়েছি তবুও আদ্রতা ৪০%এ আসছেনা.??

★উত্তরঃ
অনেক ইনকিউবেটর চালক ভাই আছেন যারা আর্দ্রতা মাপক, হিসেবে HTC-2 বা এই জাতীয় হাইগ্রোমিটার ব্যবহার করেন, যে মিটারের একটা লম্বা তারের মাথায় একটা সেন্সর লাগানো থাকে,

অনেকেই সেটাকে হিমিউডিটি সেন্সর ভেবে ইনকিউবেটরের ভিতর সেই সেন্সর দিয়ে মিটার টা বাহিরে রাখেন। তাদের মেশিনে  আর্দ্রতা কখনোই ইচ্ছামত নিয়স্ত্রনে আসেনা, কারন তারা যেটাকে হিমিউডিটি সেন্সর ভেবে ইনকিউবেটরের ভিতরে দিয়েছে সেটা আসলে ট্যম্পারেচার সেন্সর,অর্থাৎ মিটারে ইনকিউবেটরের ভিতরের আদ্রতা পরিমান দেখাচ্ছে না,
হাইগ্রেমিটার যেটা দেখাচ্ছে সেটা আসলে মিটারের ভিতরের আর্দ্রতা

কারন ঐ মিটর গুলোর হিমিউডিটি সেন্সর মিটারের ভিতরে সার্কিটের সাথে যুক্ত।
সেই কারনে পুরো  আর্দ্রতা মাপক মিটারকেই ইনকিউবেটরের ভিতরে রেখে বাহির থেকে ফুটো দিয়ে মিটারের ডিস্পেলে দেখতে হবে, তবেই ইনকিউবেটরের ভিতরের সঠিক আদ্রতার পরিমান পাওয়া যাবে।
এখন অনেকেউ বলে থাকেন বরফ দিয়েও  আর্দ্রতা কমাতে পারে নাই, তারা ছোট্ট একটা পরিক্ষা করবেন,
প্রথমে জানবেন বাতাসের আদ্রতা আসলে কি.?
বাতাসের আদ্রতা হচ্ছে বাতাসে জ্বলীয় বাস্পের পরিমান, অর্থাৎ বাতাসের মধ্যে পনির অনু থাকলে সেটাকেই আমরা বাতাসের  আর্দ্রতা বলে থাকি।

এখন আমরা যদি বাতাস থেকে পানি ঝড়াতে পারি তবে বুঝবো বাতাসের আদ্রতাও কমাতে পেরেছি।

পরিক্ষাঃ

কয়েক টুকরা বরফ একটা পলেথিন ব্যগে তুলে ভালোভাবে পলেথিন ব্যগের মুখ বেঁধে নিন, এবার দেখুন সেই পলেথিন ব্যগের বাহির পিষ্ঠে পানির বুদ বুদ জমেছে, এখন ভাবুন তো পলেথিন ব্যগের বাহির পিষ্ঠে পানি এলো কোথায় থেকে.!

সেই পানিই হচ্ছে বাসাতে মিসে থাকা পানির অনু গুলো, ঐ বরফের কাছে যে বাতাস এসেছে সেই বাতাসের পানি ঝরে পড়েছে, কিন্তু শুধুমাত্র সেই বাতাস থেকেই  আর্দ্রতা ঝরে পড়েছে যে বাতাস বরফের বা ঠান্ডার সংস্পর্শে এসেছে।
তাহলে বুঝা গেলো ইনকিউবেটরের ভিতর বরফ দিলে  আর্দ্রতা কমবেই।
তবে এর শর্ত হচ্ছে সেই বরফের সংস্পর্শে বাতাসকে আসতে হবে।

অর্থাৎ ইনকিউবেটরের যে স্থানে বাতাস প্রবাহিত হয় সেখানে বরফ রাখলেই আদ্রতা দ্রুত কমে যাবে, তবে বরফ গলে শেষ হওয়া মত্রই পানিটা সরে ফেলতে হবে।
ঠিক সেই ভাবে চক দিয়ে আর্দ্রতা কমাতে চাইলে ইনকিউবেটরের যে স্থানে বাতাস প্রবাহিত হয় সেই স্থানে রাখতে হবে,

তবে হিট চেম্বারের কাছে বা সার্ক্লুয়েশন ফ্যনের কাছে রাখা যাবেনা, কারন সেখানে ইনকিউবেটরের অন্য স্থান অপেক্ষা তাপমাত্রা বেশি থাকে।
কাজেই ‘চক’ বা ‘চুন’ এমন স্থানে রাখুন যেখানে ইনকিউবেটরের ভিতরের তাপমাত্রার সমান তাপমাত্রা বজায় থাকে এবং বাতাস প্রবাহিত হয়ে চকে লাগে।

*তৃতীয় প্রশ্নঃ ইনকিউবেটরে ডিম দেবার পরে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটার আগেই বাচ্চা মরা গেছে, এর কারন কি.?

★উত্তরঃ
ডিমের ভিতরে বাচ্চা তখনই মারা যাবে যখন ডিম ফুটানোর সঠিক নিয়মের কিছু ব্যতিক্রম ঘটবে এবং সেই ব্যতিক্রম কিছু দীর্ঘসময় ধরে ঘটলে ডিমের ভিতর বাচ্চার মৃত্যু হবে,

যেমনঃ ডিম থেকে বাচ্চা ফুটাতে নিদৃষ্ট পরিমান আর্দ্রতা বজায় রাখতে হয়,  আর্দ্রতা নির্দিষ্ট রাখার মুল উদ্দেশ্য হচ্ছে ডিমের ভিতরের তরলকে নিদৃষ্ট দিনের মধ্যে সঠিক পরিমান শুকানো।
এখন যদি কেউ আদ্রতার ব্যপারে একটু উদাসীন হয় এবং অস্বাভাবিক  আর্দ্রতা ইনকিউবেটরের ভিতর রাখে,

তবে সেই ইনকিউবেটরে ডিমের তরল  নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে সঠিক পরিমান শুকাবেনা, আদ্রতা কম হলে ডিম বাচ্চা ফুটার আগেই শুকিয়ে যায়,

আর্দ্রতা বেশি হলে ডিম ফুটার সময় হলেও তরল শুকায়না, যার ফলে ডিম ভিতরে বাচ্চা বড় হয়েও মারা যায়।
এর পরে ডিমের ভিতর বাচ্চা মৃত্যুর অন্য একটি কারন হঠাৎ তাপমাত্রা বিপদজনকভাবে ২৮এর নিচে নেমে গিয়ে দীর্ঘসময় থাকা।
মনে রাখবেন ১০মিনিটের জন্যও যদি ডিম ঠান্ডা হয় তবুও ভ্রুনের মৃত্যু হতে পারে, তাই প্রয়োজন ছাড়া ঘন ঘন ইনকিউবেটর খোলা ঠিক নয়।
ডিম ২১দিন বা ১মাস ইনকিউবেটরে ফুটাতে গেলে নিজের অজান্তে ১/২দিন এমন সমস্যা হওয়ার জন্য ডিমের ভিতর ভ্রুন মারা গেলে হতাশ হবার কিছু নেই।

লেখকঃআব্দুল ওহাব(০১৭৪৬৬০৯২২০)
.

Please follow and like us:

About admin

Check Also

হ্যাচারী

হ্যাচারীতে হ্যাচিং বাচ্চা্য় কি কি ত্রুটি হয়,কারণ এবং সমাধান

হ্যাচারীতে হ্যাচিং বাচ্চা্য় কি কি ত্রুটি হয়,কারণ এবং সমাধান ১।ভ্রূণ  মারা যাওয়া কারণ প্যারেন্টে সুষম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »