Breaking News
পোল্ট্রি শিল্প
পোল্ট্রি শিল্প

পোল্ট্রি শিল্পের অবস্থা,কারণ,সমাধানে করণীয়।

পোল্ট্রি শিল্পের অবস্থাঃ

পোল্ট্রি মার্কেট স্থিতিশীল না,একেক বছর একেক রকম তবে সব কিছুর দাম বাড়ে কিন্তু ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়েনা ৮-১০ বছর আগে যা ছিল এখনো তাই আছে অথচ খাবারের দাম বস্তা প্রতি ১হাজার টাকার বেশি বেড়ে গেছে কয়েক বছরে।জুয়া খেলার মত।কখনো ডিমের দাম কমে যায় (৮টাকা থেকে ৫টাকায় চলে আসে)আবার খাবারের দাম বেড়ে যায়( গত ১বছরে খাবারের দাম ৮০০টাকা বেড়েছে ২০২২ সালে) বা ব্রয়লারের দাম কমে যায়(১৪০টাকা থেকে ৯০টাকায় চলে আসে,বছর অনুযায়ী দামের রিপোর্ট টি পড়লেই ক্লিয়ার হবে।)।পোল্ট্রি ব্যবসা অনেক ব্যয়বহুল ব্যবসা।এক হাজার লেয়ারের জন্য ৯-১০লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হয় আর ১হাজার ব্রয়লারের ক্ষেত্রে ৪-৫লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হয়।এত টাকা ৯০% খামারীর পক্ষে ম্যানেজ করা সম্বব হয় না তাই বাকিতে চলে এই ব্যবসা।বাকিতে হবার কারণে ডিলারের হাতে সব ক্ষমতা থাকে দাম বেশি রাখে/রাখতে হয়।।বাচ্চা প্রতি ১-৫টাকা বেশি রাখে,রেডি মুরগি বিক্রির সময়  প্রতি কেজিতে ১-৩টাকা বেশি রাখে।ডিলারের কথা অনুযায়ী সব করতে হয়।এমন কি ডাক্তার পর্যন্ত ডিলারের কথা অনুযায়ী দেখাতে হয়।লাভের অংশটা ডিলারের হাতেই বেশি থাকে।প্রতি বছর ২০% খামারী ঝড়ে পড়ে আবার ২০% খামারী এড হয়।এভাবেই চলছে আমাদের পোল্ট্রি শিল্প।আমাদের দেশে এখনো প্রসেস ডিম বা মাংস বিক্রি হয় না যার কারণে দামের স্থিতিশীলতা বজায় রাখা কঠিন।লাইভ মুরগি বিক্রি হয় যার কারণে রোগের বিস্তার বেশি হয়।তাড়াছা ডাক্তাররাও ফার্ম টু ফার্ম ভিজিট করে যা ঠিক না।এভাবে সার্ভিস দেয়া ডাক্তারদের জন্য অনেক কঠিন হচ্ছে।একজন ডাক্তারকে এক বা কয়েকটি জেলায় সেবা দিতে হয়।ডাক্তারের জন্য একটা চেম্বার থাকা উচিত যেখানে খামারীরা মুরগি নিয়ে আসবে।এতে সবার জন্য ভাল হবে।রোগ ছড়াবেনা।ব্রয়লারের প্রায় ৭০% মুরগির চিকিৎসা ডিলার ও এম এর রা করে,লেয়ারের ক্ষেত্রে ৩০% ডিলার ও এম এর দেখে বাকি ব্রয়লারের ৩০%  আর লেয়রের ৭০% ডাক্তার দেখে।স্পেসিফিক ডায়াগ্নোসিস অনেক ক্ষেত্রেই সম্বব হয়না।ল্যাবের সুবিধা এবং ল্যাবে টেস্ট করার আগ্রহ নাই বললেই চলে।ব্যবস্থাপনা থেকে চিকিৎসার প্রতি আগ্রহ সবার বেশি।ডাক্তারকে ডিলার ও খামারীর কথা অনুযায়ী সব করতে হয়।কোম্পানি গুলো ডিলার ও খামারিকে বেশি গুরুত্ব দেয় কারন  তাদের কাছে সেলই আসল।পোল্টিতে লাভ ২ধরণের ১।প্রতিদিনের হিসাব অনুযায়ী লাভ ২।স্থায়ী খরচের হিসাব ধরে লাভ।আমরা নরমালি প্রতিদিনের খরচ ধরে লাভ হিসাব করি তা ঠিক না।খামারিদের যে লাভ হচ্ছে তা দিয়ে আগের স্থায়ী খরচ(সেড,খাচা,পর্দা,পাত্র) ধরলে লাভ হবেনা/হয় না।।তাহলে কিভাবে কি হচ্ছে?আসলে আমাদের দেশের খামারীরা নিজের পুজি দিয়ে দেশের মানুষকে পুস্টির যোগান দিয়ে যাচ্ছে।২০১৬ সালের পর ডিমের যে রেট তা দিয়ে স্থায়ী খরচ উঠেনা ৮০% খামারীর।প্রতি ডিমের খরচ পড়ে স্থায়ী খরচ ধরে ৬-৬.৫টাকা যাদের প্রডাকশন ভাল  এবং মুরগিতে সমস্যা না থাকলে কিন্তু ৮০% ফার্মের ক্ষেত্রেই কোন না কোন সমস্যার কারণে ডিম কম পাড়ে বা মুরগি বিক্রি করে দিতে হয় তখন প্রতি ডিমের খরচ পড়ে ৭টাকার উপরে।(আমাদের দেশে ডিমের গড় রেট ৬.৫-৭টাকা মানে লাভ সবার হচ্ছেনা) তাছাড়া ৩টা ব্যাচের মধ্যে ১টা ব্যাচ খারাপ যায় তখন ২ব্যাচের লাভ ১ব্যাচে চলে যায়।এভাবেই ভর্তুকী দিয়ে দেশের মানুষকে ডিম ও মাংসের যোগান দিচ্ছে খামারীরা।তবে  কি খামারীরা ইচ্ছে করে দেশের উপকার করছে তা কিন্তু না।খামারীরা হল মাছের মত,যখন বরশী গিলে তখন খুব ভাল লাগে মানে মজাদার খাবার খাচ্ছে কিন্তু কিছু ক্ষন পরেই টের পায় যখন সুতায় টান পরে।জীবন তখন শেষ।১ম অবস্থায় ফার্ম নতুন থাকে ভালই লাভ হয়,সেড বাড়াতে থাকে,মাছের বরশী গিলার মত।তাহলে সমাধান কি?ডিমের দাম বাড়াতে হবে ৮-৯টাকা করা উচিত,ব্রয়লারের রেট ১৪০-১৫০টাকা করতে হবে।খাবারের দাম কমানোর জন্য দেশেই ভুট্রা ও সয়াবিন উতপাদন বাড়াতে হবে,স্লটার হাউজ করে সেখান থেকে মিট এন্ড বোন মিল বানাতে হবে,পোল্ট্রি থেকে পোল্ট্রি মিল,মাছ থেকে ফিশ মিল বানাতে হবে।তাহলে খাবারের দাম অনেক কমে যাবে,ফার্ম লাভ জনক হবে।ফার্মের সেডটা ঠিক মত  করতে হবে,ব্যবস্থাপনা ভাল করতে হবে।এতে ফার্ম এর লাভ বেড়ে যাবে।সেড বানানোর আগেই ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।মুরগি মারা যাবার পর না।

এভাবে ২০২২ সালের মত চলতে থাকলে খামারি ৩এর  ১ অংশ কমে যাবে,ইতিমধ্যে ৪এর ১ অংশ খামারী কমে গেছে।তখন ব্রয়লার হবে ২৫০-৩০০টাকা,ডিম হবে ১৫-২০টাকা।বড় বড় কোম্পানীই থাকবে।ছোট খামারী হারিয়ে যাবে।এসব খামারী বেকার হলে সমাজে বিশৃঙ্খলা দেখা দিবে,বিপদ্গামী হবে যুব সমাজ।হাজার হাজার যুব সমাজ পোল্ট্রি সেক্টরকে জীবিকা হিসাবে নিয়েছিল।এখন পর্যন্ত একটা পোল্ট্রি নীতিমালা/বোর্ড হল না অথচ গার্মেন্টস ও রেমিটেন্টেস এর মত  গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর হল পোল্ট্রি শিল্প।পোল্ট্রি সেক্টরের গুরুত্ব প্রধান মন্ত্রী পর্যন্ত পৌছাতেই কেউ পারলো না।করোনার মত দুর্যোগে পোল্ট্রি,ডেইরী,কৃষি এই ৩ আদি পেশা/ সেক্টরই আমাদের আশির্বাদের মত হয়ে দাড়িয়েছিল।এক সময় যখন এত শিল্পায়ন থাকবেনা তখন এই সেক্টরগুলোই আমাদের বাচিয়ে রাখবে তাই এসবের গুরুত্ব দিতে হবে।ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সমস্যা দেখা যাচ্ছে ।এই ৩টিতে স্বয়ং সম্পূর্ণ হলে চিন্তার কারণ থাকবেনা।কৃষিতে সরকার যত গুরুত্ব দিয়েছে তার অর্ধেক গুরুত্ব দিলে পোল্ট্রি সেক্টরের সমস্যা থাকবে না।বিদেশে পোল্ট্রি রপ্তানি করা যাবে তবে খামারীদের নিয়ে কেউ ভাবেনা।সব সেক্টরে এসোসিয়েশন আছে,তাদের কথা বলার এবং শুনার সুযোগ আছে কিন্তু খামারীদের কিছুই নাই।সাগরে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে সাতার জানলে বাঁচ না জানলে ডুবে মরে যাও।সরকার থেকে যা কিছু সুবিধা দেয়া হয় তার অধিকাংশই কোম্পানি পায়। টোটাল আর্টিকেল পড়ার পর পরিস্কার ধারণা পাবেন ইনশাল্লাহ।

২০১৮ সালে নরসিংদীতে প্রায় ৩৫ লাখ লেয়ার,এর মধ্যে প্রায় ৪০% (প্রায় ১৫লাখ)লেয়ার গত ৬ মাসে মারা গেছে বা খামারী বিক্রি করে দিয়েছে।

৫০% ফার্মে প্রডাকশন কম মানে ১০-২৫% কম,৭০-৮৫%।

এখানে ৪টি বিষয় প্রধানত গুরুত্বপূর্ণ

১।প্রায় ২ বছর ধরে ডিমের দাম কম যা বাংলাদেশের মধ্যে লম্বা সময়।।

২।রোগ৩।ফিডের দাম বেশি ৪।ডিমের প্রডাকশন বেশি

ছোট ছোট খামারী নিয়ে গড়ে উঠা পোল্ট্রি খামার এখন শিল্পে পরিণত হয়েছে।

গ্রামের বেকার যুবক,বিদেশ ফেরত লোক,চাকরিজীবী,সরকারী লোক,ডাক্তার সহ সবাই এই পেশায় জড়িয়ে পড়ে।

ফিডমিল,হ্যাচারী,ব্রিডার ফারম,মেডিসিন কোম্পানী ,ডি ভি এম মিলে এক বিশাল বাজার তৈরি হয়।বাংলাদেশের আবহাওয়া ও পোল্ট্রির জন্য অনুকূল কারণ এখানে লেয়ারের প্রডাকশন ভাল থাকে মানে পিক প্রডাকশন গড়ে ৯২-৯৫% উঠে এবং গড়ে ৯০ সপ্তাহ পর্যন্ত ডিম পাড়ে।ব্রয়লারের ক্ষেত্রে ও এফ সি আর ভাল।লেয়ার ও ব্রয়লারের রিজাল্ট অন্য অনেক দেশ থেকে ভাল।আমি পৃথিবীর অনেক দেশের লিটারেচরের সাথে মিলিয়ে দেখেছি আমাদের দেশের প্রডাকশন ভাল।১৮কোটি লোক,সস্তা শ্রমিক,প্রডাকশন ভাল তাই বিদেশি কোম্পানীর লোভ থাকতে পারে এখানে ব্যবসা করার জন্য।২০১৫ সালের দিকে ডিমের দাম ভাল ছিল তাই সবাই লেয়ারের দিকে ঝুকে পড়ে।১০০০ লেয়ার পালন করলে মাসে ১লাখ লাভ হত।২০১৬ সালে ১ম দিকে বাচ্চার দাম ছিল ১০০-১৫০টাকা তাই বিভিন্ন কোম্পানী লেয়ারের ব্রিডার আনতে থাকে।এতে লেয়ার বেড়ে যায় ফলে প্রডাকশন বেড়ে তাই ডিমের দাম কমে যায়।

নরসিংদীর কিছু খামারীর অবস্থা

মোঃ শহীদ,চৈতন্য,তার ১২০০০ লেয়ার মুরগির ফার্ম ,এখন মুরগি নেই,মারা গেছে এবং বিক্রি করে দিয়েছে।উনার সেড তৈরিতে প্রায় ২৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।

১০০০ লেয়ার ৫০% প্রডাকশনে আনতে  ৩.৫-৪ লাখ টাকা খরচ হয়।এবার দেখেন কত টাকা লাগে মুরগি পালন করতে।।

কবির ,সিস্টিগড়,লেয়ার ছিল ১০০০০,বয়স ৫০ সপ্তাহ,ডিমের রেট ভাল না তাছাড়া সমস্যার কারণে মুরগি বিক্রি করে দেয়।পরে আবার ১০০০০ লেয়ার তুলে , ৭ সপ্তাহ বয়সে রানিখেতের কারণে ২০০০ মারা যায়।কবির সাহেব বলেন আমি ৬০ লাখ বিনিয়োগ করে কোন লাভ হয়নি।

রাজন ,হাটুভাংগা ,রায়পুরা,৭৫০০লেয়ার মুরগি,বয়স,৫০ সপ্তাহ,ডিমের রেট ভাল ছিল না,তাই ৪৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে মাথায় হাত।ভাইরাল রোগের  কারণে প্রডাকশন ৯০% থেকে ৭০% এ চলে আসে,লাভ হচ্ছে না,তাই বিক্রি করে দিয়েছে।উনার আরো ১৩০০০ লেয়ার আছে,বয়স ৯সপ্তাহ,২১ সপ্তাহ,ডিমের যে রেট তাতে কি হবে?

আমিনুল,জয় মংগল,শিবপুর,লেয়ার ১০০০০,১টার বয়স,৫০ সপ্তাহ,ডিমের রেটের কারণে ৭৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ভুল করেছেন বলে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।রোগের কারণে ডিম ৬০% এ চলে আসে তাই বিক্রি করে দেয়ার চিন্তা করতেছে,৫০০০ লেয়ারের বাচ্চা আছে বয়স,৮ সপ্তাহ।

মানিক,চৈতন্য,৫০০০লেয়ার,৩০০০ লেয়ার রোগে আক্রান্ত হবার কারণে প্রডাকশন ৭৫% যা এই দামের বাজারে রেখে লাভ নেই।বাচ্চা ২০০০,বয়স ১৫ সপ্তাহ ,সামনে কি বাজার ভাল হবে এই অপেক্ষায় আছেন।

রফিক ,শিল্মান্দি,সদর,লেয়ার বিভিন্ন বয়সের ৮০০০ছিল,এখন ৫০০০ আছে,তিনি আবার ৩০০০ বাচ্চা নিয়েছে যদি দাম বাড়ে।

হারুন,দুলালপুর,শিবপুর,৩ তলা বিল্ডিং,পাশে ৪০০০ লেয়ারের আলাদা সেড,১২০০০ লেয়ার ছিল,এখন ৮০০০ আছে,আরো ৪০০০ যায় যায়।আরো ৪০০০ বাচ্চা নেয়ার পরিকল্পনা ছিল।বিনিয়োগ করেছেন প্রায় ২ কোটি টাকা।

সোহরাব,রাজারবাগ,বেলাবো,তার এবং তার আত্নীয়ের প্রায় ৮০০০ লেয়ার ছিল,ডিমের দাম পায়নি,তাছাড়া রোগের কারণে মুরগি মারা  যাওয়ায় এখন নতুন করে বাচ্চা তুলতে ভয় পাচ্ছে।এই রকম শত শত খামারী শেষ হয়ে যাচ্ছে।যদি ডিমের রেট ভাল থাকত তাহলে অন্যান্য সমস্যা মোকাবিলা করা যেত।

প্রায় ২ বছর ধরে ডিমের বাজার খারাপ মানে রেট ৪-৫.৫ টাকার  কাছাকাছি।২বছর আগে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ডিমের রেট থাকত ৬-৮টাকা।প্রতি ডিমের খরচ প্রায় ৫টাকা,যদি ডিমের প্রডাকশন ৯০%  বা এর উপরে  থাকে তাহলে ৪.৫টাকা খরচ হয়।কিন্তু ৯০% এর উপরে বেশি দিন সবার থাকেনা।খামারী যদি লাভ করতে চায় তাহলে মিনিমাম ৬টাকা রেট হতে হবে কারণ তার এক কালীন যে খরচ হয়েছে তা ঊঠে আসতে হবেরঅধিকাংশ খামারী বাকীতে ব্যবসা করে তাদের অবস্থা বেশি খারাপ,তাদের প্রডাকশন খরচ আরো বেশি মানে ৫.৫০টাকা।তাদের খাবারের রেট ও মেডিসিনের খরচ বেশি ধরা হয়।তাছাড়া কোন সমস্যায়  ২০-৪০ সপ্তাহে ২০০০ লেয়ার যদি বাতিল বা কম প্রডাকশন দেয় তাহলে খামারীর সাথে সাথে ৮ লাখ টাকা শেষ।আর সেডের খরচ ৫-৬ লাখ টাকা পড়ে থাকবে।টোটাল ১৩ লাখ টাকা।এই ঘটনা প্রায় ই হচ্ছে।নরসিংদী একটি নমুনামাত্র,অন্যান্য জেলায় একই অবস্থা।

এভাবে চলতে থাকলে কি হবে?

লোকজন বেকার হয়ে যাবে।অর্থের দেনায় পালিয়ে বেড়াবে।সমাজে অরাজকতা দেখা দেবে।যুব সমাজ বিপদগামী হবে।

নরসিংদীতে  যারা লোজ ফিড বিক্রি করে তাদের ফিল্ডে প্রায় ১০০কোটি টাকা পড়ে আছে।খামারী ডিমের দাম দিয়ে খাবার কিনতে পারেনা।ফলে ডিলারের কাছ থেকে খামারীরা ক্রেডীট নিচ্ছে,দেনা বেড়ে যাচ্ছে।এভাবে চলতে থাকলে ডিলার খাবার দিতে পারবেনা। খামারী মুরগি বিক্রি করে দিচ্ছে।খামারী ও ডিলারের হাতে টাকা থাকবে না।এই সুযোগে বড় কোম্পানী তাদের ব্যবসা শুরু করবে।ছোট কোম্পানী বা খামারী ঝড়ে যাবে।ব্যবসা করবে শুধু বড় কোম্পানী আর ডিম বিক্রি করবে ১০-১৫টাকা করে।ব্রয়লার বিক্রি করবে ৩০০-৩৫০টাকা কেজিতে।

কে দায়ী?

১।ডিমের প্রডাকশন বেশি(মানে আমরা যা খায় তার থেকে বেশি) ২।বড় বড় কোম্পানী নিজেরা কমার্শিয়াল লেয়ার পালন করে ৩।সরকারের তদারকি নেই৪।রহস্য জনক সিন্ডিকেট যা ডিমের ও বাচ্চার দাম ঠিক করে।৫।ডিমের পুস্টিগুণের ব্যাপারে মানূষের ধারনা কম এবং ডিমের বিরুদ্ধে অপপ্রচার।আগে ডিমের রেট ভাল ছিল মানে ১০০০ লেয়ার পালন করলে মাসে ১ লাখ টাকা হত সেই আশায় অনেকে এই ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে।ফলে মুরগি বেড়ে যায়।৬।পোল্ট্রি শিল্পে সুদ কম বা সুদ বিহীন লোনের কারণে বা অবৈধ টাকা বৈধ করার এটি ভাল সুযোগ।৭।বিদেশে রপ্তানির সুযোগ না থাকা।৮।বাজার সার্ভে না করে ব্যবসা শুরু করা।

কিছু তথ্য

দৈনিক দেশে প্রায় ৪ কোটি ডিম উৎপাদিত হয়.প্রায় ৪০ লাখ লোক এই ন্সেক্টরে নিয়োজিত,পরোক্ষভাবে আরো ২০লাখ জড়িত।পোল্ট্রি শিল্পে বিনিয়োগের পরিমান প্রায় ৫০০০০ হাজার কোটি টাকা।

১৮কোটি লোকের মধ্যে নিচের মত করে যদি  সবাই দৈনিক ডিম খায় তাহলে

আইটেম।                      ডিমের পরিমান
১.প্রতিশিশু ডিম খাবে          ১কোটি
২.স্কুল,কলেজ,ভার্সিটির
ছাত্র ছাত্রী (টিফিন)              ১কোটি
৩.সফট ডিংক্সের পরিবর্তে ৩০লাখ
৪.শিল্প কারখানায় শ্রমিক      ৫০লাখ
৫.সব অনুষ্ঠানে                      ৫লাখ
৬.ফাস্ট ফুডের পরিবর্তে      ২০লাখ

৭।ধূমপানের বদলে ডিম          ২৫ লাখ

৮।হোটেলে ১টি করে ডিম     ৫ লাখ

৯।ভিক্ষায় টাকার বদলে ডিম ৫লাখ

১০।টিভিতে এড দিলে বাড়বে      ২৫ লাখ

১১।রোগি দেখতে ডিম                 ৫লাখ
টোটাল।                           ৩ কোটি ৭০ লাখ.

# বাড়তি ডিম বিদেশে রপ্তানি করতে হবে।

# ফিডমিল,হ্যাচারী ও ব্রিডার মালিকদের কমারশিয়াল লেয়ার ও ব্রয়লার করা থেকে বিরত রাখতে হবে।করলেও তা খামারীদের দিয়ে করাতে হবে।

কিভাবে সম্বব

শিশু,স্কুল কলেজ এবং শিল্পকারখানার ক্ষেত্রে সরকার এবং এন জি ও কাজ করতে পারে।প্রতিটি টিভি চ্যানেলে ডিমের ওপর প্রতিদিন একবার এড দেয়া বাধ্যতামুলক করা যেতে পারে।ডিমের অপপ্রচার রোধে টিভিতে আলোচনা করা।এতে ডিমের পরিমান অনেক বেড়ে যাবে মানে হল।নতুন৩০ লাখ লোকের কর্ম সংস্থান হবে।বিনিয়োগ হবে বাড়তি ৩০০০০কোটি টাকা।মেধাবী এবং সুস্থ জাতি তৈরি হবে।এতে দ্রুত ডিমের চাহিদা বেড়ে যাবে এবং আপাতত সংকট থেকে কিছুটা রক্ষা পাওয়া যাবে।

নিচের অংশটুকু লিখেছেন মোরশেদ আলম ভাই

পোল্ট্রি শিল্প সুসংহত করতে কিছু পরামর্শ

১. খামারী সংগঠন

ইউনিয়ন পর্যায়ে পোল্ট্রি খামারি সংগঠন করে, প্রতিটি ইউনিয়নের সভাপতি ও মহাসচিব অথবা তাদের প্রতিনিধিকে সদস্য করে সংগঠিত হবে উপজেলা পোল্ট্রিশিল্প সংগঠনের কমিটি। এই কমিটির সদস্যগণ নির্বাচিত করবে উপজেলা পোল্ট্রি সংগঠনের সভাপতি ও মহাসচিব। এভাবে উপজেলা সংগঠনের সভাপতি ও মহাসচিব অথবা তাদের প্রতিনিধি সমন্বয়ে গঠিত হবে জেলা সংগঠন। প্রতিটি জেলার সভাপতি ও মহাসচিব সমন্বয়ে গঠিত হবে জাতীয় পোল্ট্রিশিল্প সংগঠন। পোল্ট্রিশিল্পের উন্নয়নে সরকার ও সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে মতবিনিময় ও পরামর্শ দিবে এই জাতীয় সংগঠন।

২. ভুট্টা সংরক্ষণ

দেশে উৎপাদিত ভুট্টা সংরক্ষণের জন্য সরকারি পর্যায়ে কিছু আধুনিক সংরক্ষাণাগার স্থাপনা করা উচিত। এতে ভুট্টা উৎপাদনকারিগণ সারাবছর যেমন ন্যায্যমূল্য পাবেন, তেমনি খামারিদের পোল্ট্রি খাদ্য মূল্য স্থিতিশীল থাকবে।

৩. ভেটেরিনারী সেল

পোল্ট্রি শিল্পে প্রয়োজনীয় ঔষধ, ভ্যাক্সিন, পুষ্টিসামগ্রি, ইত্যাদি, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ আলাদা। বর্তমানে ভেটেরিনারি ও মানুষের ওষুধ একই ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন এর অধীনে, যেখানে পোল্ট্রি গুরুত্ব পায় খুব কম। পোল্ট্রি অত্যন্ত সংবেদনশীল বলে তাকে সময়মতো ওষুধ, পুষ্টি সামগ্রী, না দিতে পারলে সে মারা যাবে অথবা দ্রুত অসুস্থ হয়ে পরবে। আমলাতান্রিক জটিলতায় আর সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিদের অবহেলায় ভেটেরিনারি পণ্যের আমদানি অথবা উৎপাদন পড়ে থাকে দিনের পর দিন। এক্ষেত্রে ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশনের প্রতিনিধি, প্রানিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, AHCAB প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিনিধি সমন্বয়ে একটি পৃথক ‘ভেটেরিনারি সেল’ তৈরি করে ভেটেরিনারি পণ্যের দ্রুত সিদ্ধান্ত দিতে পারলে উন্নতমানের ভেটেরিনারি পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত হবে। জাতীয় প্রানিসম্পদ নীতিমালায় এই সেল এর কথা সুষ্পস্টভাবে বলা হলেও তার কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। AHCAB কেই নিতে হবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।

৩. সরকারি পর্যায়ে পোল্ট্রি পণ্য ব্যবহার

বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (FAO) এর মতে, প্রতিটি মানুষের বছরে কমপক্ষে ১০৪টি ডিম খাওয়া প্রয়োজন। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বাংলাদেশের মানুষ গড়ে বছরে ৭৫টি ডিম খায়। তারমানে এক্ষেত্রে এখনো আমরা পিছিয়ে আছি। সরকারি হাসপাতাল, প্রাইমারী স্কুলের টিফিনের সাথে ডিম গ্রহণ উৎসাহিত করে মানুষের পুষ্টিমান বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকার পোল্ট্রিশিল্প কে সহযোগিতা করতে পারে।

৪. পোল্ট্রি বোর্ড গঠন:

যেহেতু পোল্ট্রি একটি সংবেদনশীল শিল্প। তাই এর সাথে সংশ্লিষ্টদের সিদ্ধান্ত নিতে হয় দ্রুত এবং যথা সময়ে। সংশ্লিষ্ট সকলের যেমন- সরকার, বৈজ্ঞানিক, শিক্ষক, সংগঠনের প্রতিনিধি, ইত্যাদি সকলের সমন্বয়ে একটি ‘পোল্ট্রি বোর্ড’ এ শিল্পকে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থেকে মুক্ত করে গতি এনে দিতে পারে।

৫. পোল্ট্রিবীমা:

ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশের মত ‘পোল্ট্রি বীমা’ প্রচলন করলে, খামারি উন্নত খামার ব্যবস্থাপনায় উদবুদ্ধ হবেন।

৬. গ্রহণযোগ্য পরিসংখ্যান:

পোল্ট্রি শিল্পের একটি গ্রহণযোগ্য ও উন্মুক্ত ও সমন্বিত পরিসংখ্যান প্রয়োজন। যেখানে থাকবে বিভিন্ন পোল্ট্রির সংখ্যা, প্রতিদিনের ডিম, ব্রয়লার, বাচ্চা, খাদ্য, ইত্যাদির উৎপাদন। হ্যাচারি ও ফিডমিলের উৎপাদন ক্ষমতা ও বর্তমান উৎপাদন। ওষুধ উৎপাদন এবং আমদানির সঠিক তথ্য। এছাড়াও প্রয়োজন ভোক্তা পর্যায়ে বিভিন্ন সময়ের চাহিদা।

নিচের অংশটুকু লিখেছেন মজুমদার অঞ্জন

পোল্ট্রি খামার করবেন?

অন্যের প্রলোভনে না পড়ে, আগে লাভ লোকসানের হিসাব করুন (ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি)

( বর্তমান বাজার দর হিসাব করবেন)

১০০০ ব্রয়লার মুরগী পালনে লাভ লোকসান হিসাবঃ

প্রতিটি ৫৬ টাকা= মোট ৫৬০০০ টাকা

(★এফ সি আর ১.৪ অর্থাৎ প্রতি কেজি মাংস পেতে ১ কেজি ৪০০ গ্রাম খাদ্য লাগবে)

১৭০০ গ্রাম গড় ওজনের জন্য খাদ্য দরকার ২.৩৮ কেজি, প্রতি কেজি ফিডের দাম ৫৮ টাকা,

১০০০ মুরগির জন্য খাদ্য বাবত খরচ= ১,৩৮,০৪০ টাকা

।। বাচ্চা + খাদ্য খরচ = ১,৯৪,০৪০ টাকা।।

মর্টালিটি ৫% ( মৃত্যু হার আনুমানিক) হিসাব করে

মুরগীর মোট ওজন ৯৫০ পিস x ১.৭ কেজি ( গড় ওজন) = ১৬১৫ কেজি ( বিক্রয় যোগ্য মাংস)

মোট বিক্রয় মুল্য = ১৬১৫ x ১৩৩ টাকা = ২১৪৭৯৫ টাকা

মুরগী বিক্রিয় পরে আয় = ২,১৪,৭৯৫ – ১,৯৪,০৪০= ২০,৭৭৫ টাকা।।

নেট আয়/মুনাফা = ২০,৭৭৫ – ( তুষের খরচ + ভ্যাক্সিন + ভিটামিন + চিকিৎসা খরচ + বিদ্যুৎ বিল + কর্মচারী বেতন + ঘর ভাড়া / ঘর বানানো বাবত খরচের অংশ+ পরিবহন) = লাভ /লোকসান

( যার যার খরচ হিসাব করুন)

বিঃদ্রঃ ব্যবস্থাপনা ( মুরগী লালনপালন) খরচ এক এক জনের ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।

★★★ রোগবালাই, রেডি মুরগির দাম আরো কমে যাওয়া, বাচ্চা ও খাদ্যের দাম আরো বেড়ে যাওয়া এগুলো বিবেচনায় নিতে হবে।

লেয়ার খামারের হিসাবঃ

বর্তমানে একটা বাদামী ডিমে খামারিদের লাভ লোকসানের খতিয়ান-

প্রতি ডিমে (বাদামি) খরচ:

১) খাদ্য বাবত খরঅচ= ৫.৬৪ টাকা

২) পুলেট বাবত প্রতি ডিমে খরচ= ১.৯২

৩) দৈনিক অন্যান্য খরচ = ০.৪২ টাকা

৪) পরিবহন, ডিম নষ্ট /বাতিল/ভাঙা= ০.১২ টাকা

৫) খাঁচা বাবত ( ডিপ্রিসিয়েশন) = ০.০৭ টাকা

৬) ঘর বাবত ( ডিপ্রিসিয়েশন) = ০.১৮ টাকা

=================================

বর্তমানে প্রতি ডিমে উৎপাদন খরচ = ৮.৩৫ টাকা

১টি বাদামী ডিমের খামারিদের বিক্রয় মূল্য- ৬.৮০ টাকা

১ টি ডিম উৎপাদনে মুরগী প্রতি খাবার লাগে ১১৫ গ্রাম

১ কেজি খাবারের বর্তমান দাম ৪৯ টাকা

১ টা ডিম উৎপাদনে খাবার বাবত খরচ = ৫.৬৪ টাকা

প্রতিটি ডিম উৎপাদনে ( ভিটামিন মেডিসিন বিদ্যুৎ কর্মচারী বেতন ইত্যাদি বাবত) খরচ ০.৪২ টাকা

★★★ রোগ বালাই মৃত্যুহার বেশি, ডিমের প্ররাসেন্টেজ কম হলে খরচ আরো বেশি হবে)

ডিম পাড়ার আগে পর্যন্ত একটি পুলেট রেডি হতে বর্তমান বাজারে ৫৩০ টাকা খরচ হয়।

এই টাকা/খরচ যদি প্রতি ডিমে ধরা হয় ( প্রতি মুরগী কাল করার আগ পর্যন্ত যদি ২৮০টি ডিম দেয়) পুলেট বাবত প্রতি ডিমে খরচ হয় ১.৯০ টাকা।

পরিবহন, ডিম নষ্ট /বাতিল/ভাঙা ইত্যাদি হিসাব করলে প্রতি ডিমে খরচ ০.১২ টাকা।

খাঁচা বাবত প্রতি মুরগী তে ২০০ টাকা খরচ।

যদি হিসাব করা হয় এই খাঁচার মেয়াদ ১০ বছর, তাহলে প্রতিবছর ২০ টাকা (প্রতি মুরগী তে),

যদি বছরে ২৮০ ডিম পাড়ে একটি মুরগী তাহলে প্রতি ডিমে খাঁচার জন্য খরচ ০.০৭ টাকা

১০০০ লেয়ার মুরগির ঘর বানাতে যদি ৫০০০০০ টাকা খরচ হয় ( ঘরের মেয়াদ যদি ১০ বছর ধরা হয়) তাহলে প্রতি ডিমে ঘরের জন্য খরচ ০.১৮ টাকা।

এবার সরাসরি হিসাব করুন –

বিঃ দ্রঃ মৃত্যুহার, রোগবালাই এর জন্য চিকিৎসা ও খাদ্যের দাম যদি আরো বাড়ে, ডিম উৎপাদনের হার যদি কাংখিত % না পাওয়া যায় তাহলে উৎপাদন খরচ আরো বাড়বে।

★★★★★★★★★★★★★★★★★★

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অবশ্যই বিবেচনায় নিবেন-

১. ব্যাংক লোনের কিস্তি এবং সুদ

২. ডিলার থেকে কিনলে বাচ্চা খাদ্য ঔষধ ভিটামিনের দাম বাড়বে ফলে প্রতি কেজি ব্রয়লার ও প্রতি ডিমে উৎপাদন খরচ আরো বাড়বে।

৩. আপনি পোল্ট্রি পালনে অভিজ্ঞ না হলে সব সময় অন্যের উপর নির্ভরশীল থাকতে হবে এবং খরচ বাড়বে।

৪. আপনি কি সরাসরি ডিম বা মুরগী বিক্রির ক্ষমতা রাখেন নাকি অন্যে যে সিধান্ত নেয় তা মেনে নিয়ে বাজার দাম থেকে কম দামে বিক্রি করবেন ( ডিলার, মহাজন, দাদন,কন্ট্রাক্ট গ্রোয়িং )

৫. আপনি কি সঠিক ভাল মানের বাচ্চা খাদ্য নির্বাচন করতে পারবেন নাকি ডিলার যা দেয় তাই নিতে হবে।

৬. আপনি কি বাজারের গতি প্রকৃতি সম্পর্কে ধারনা রাখেন?

উপরের সকল বিষয় যদি গুরুত্ব দিয়ে বিশ্লেষণ করে আপনার মনে হয় পোল্ট্রি ফার্ম করা আপনার জন্য লাভজনক

তাহলে আপনাকে পোল্ট্রি খামার ব্যবসায় স্বাগত

যদি মনে হয় ঝুঁকি পুর্ণ এই পোল্ট্রি ব্যবসা তাহলে আপনার জন্য শুভ কামনা অন্য কোন সুরক্ষিত ব্যবসায় বিনিয়োগ করুন।।

লেখক

কৃষি অঞ্জন মজুমদার

সমন্বয়ক

পোল্ট্রি প্রফেশনাল’স,বাংলাদেশ ( পিপিবি)

ঢাকা বাংলাদেশ

বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্পের বর্তমান সংকট এবং এর পিছনের কারণগুলো
১. অধিক উৎপাদন, তার তুলনায় চাহিদা কম।
২. ডিম এবং পোল্ট্রি মাংস নিয়ে কিছু মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধারাবাহিক নেতিবাচক প্রচারণা।।
৩. ভোক্তাদের পোল্ট্রি জাত পণ্য যেমন ডিম মাংস গ্রহণে উৎসাহিত করার জন্য, শিল্প সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাক্তি, সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের তরফ থেকে উপযুক্ত প্রচারণার অভাব।
৪. অতিরিক্ত উৎপাদিত পন্যের জন্য রপ্তানীমূখী আন্তর্জাতিক বাজার অনুসন্ধানের জন্য সকল পক্ষের উদ্যোগ গ্রহণেরর অভাব।
৫. আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য কোয়ালিটি সম্পন্ন পন্য উৎপাদনে দক্ষ প্রোডাকশন সিস্টেম গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হওয়া।
৬. প্রকৃত পোল্ট্রি শিল্প বান্ধব ওয়ান স্টপ সার্ভিস বা সেবা সংস্থা না থাকা।
৭. আন্তর্জাতিক মানের পোল্ট্রি পন্য উৎপাদনের জন্য দক্ষ জনবল এবং ট্রেনিং প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য এখন পর্যন্ত কোন উদ্যোগ গ্রহণ না করা।
৮. পোল্ট্রি খাদ্যের প্রধান কাঁচামাল ভূট্টা সংরক্ষণেরর জন্য সরকারী ভাবে প্রধান প্রধান পোল্ট্রি হাবে সাইলো বা গুদামের ব্যবস্থা না করা যা ভূট্টার দাম নিয়ন্ত্র্ণে সহায়ক হত।
৯.বাজার মনিটরিং, কালোবাজারি ও মধ্যসত্ব ভোগীদের দৌরাত্ম্য কমানোর জন্য জেলা উপজেলা ভিত্তিতে পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা না থাকা।
১০. এদেশের পোল্ট্রি শিল্প সংশ্লিষ্টদের স্বার্থ রক্ষায় সকল স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে গঠিত সর্বজনীন কোন পেশাজীবী সংগঠন না থাকা, যে সংগঠন সরকারের সাথে বার্গেনিং করবে এবং শিল্পের বিকাশে সময়ে সময়ে সরকারের সাথে এজেন্ডা ভিত্তিক দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় বসবে।
১১. ছোট ছোট খামারীদের ইউনিয়ন এবং উপজেলা ভিত্তিক সমবায় ভিত্তিক উৎপাদন ও বিপনণ ব্যবস্থা গড়ে না উঠা।
১২. বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্পে মহাজনী টাইপ পোল্ট্রি ফার্মিং পন্যের ক্রয় ও বিক্রয় ব্যবস্থার অস্তিত্ব বহাল থাকার কা্রণে দক্ষ সাপ্লাই এবং বিপনন সিস্টেম গড়ে না ওঠা।
১৩. অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠানের এই শিল্পে বিনিয়োগে নিরুৎসাহ এবং ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদ।
১৪. পোল্ট্রি ফার্মের মুরগী ভিত্তিক ইনসুরেন্স চালু না করা।
১৫. পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রির সঠিক এবং গ্রহণ যোগ্য কোন ডাটাবেস না থাকা।
১৬. সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি উদ্যোগতাদের মধ্যে কার্যকরী সমন্বয়হীনতা।
১৭. পোল্ট্রি শিল্পের অধিকাংশ কাঁচামালের যোগান আমদানি নির্ভর হওয়া।
১৮. আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচা মালের দামের উঠানামার কারণে স্থিতিশীল উৎপাদন অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্থ হওয়া।
১৯. খামারে খামারে ব্যাপক রোগবালাই’র ক্ষতিকারক প্রভাব।
২০. অনেক হাত বদলের মাধ্যমে উচ্চদামে প্রান্তিক পর্যায়ে খামারীগন ঔষধ ভিটামিন ভ্যাক্সিন কিনতে বাধ্য হওয়া।

বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্পের ইতিহাসে এই দীর্ঘ মেয়াদী সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে হলে ক্ষুদ্র এবং মাঝারী খামারীদের সমবায় ভিত্তিক উৎপাদন, বিপননে ঝুঁকতে হবে।
কেন?
১. পোল্ট্রি খাদ্য-মেডিসিন-ভ্যাকসিন-বাচ্চা কমদামে ক্রয় করার উদ্দেশ্যে।
২.গুনগত মান সম্পন্ন মাংস ডিম উৎপাদন যা ভোক্তাদের পোল্ট্রি পণ্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে আস্থা আনবে।
৩. উপজেলা ভিত্তিক সমবায় ভিত্তিক বিজনেস সেন্টার গড়ে তুলতে হবে, বিজনেস সেন্টারের মাধ্যমে প্রসেসিং প্ল্যান্ট বা অন্য যে কোন ক্রেতার নিকট প্রকৃত দামে এবং লাভজনক ভাবে ডিম বা মুরগী বিক্রি করতে পারবে। মধ্যসত্বভোগীর অস্তিত্ব অনেকাংশে হ্রাস পাবে।
৪. প্রতি সমবায় কেন্দ্রিক উপজেলায় সুনির্দিষ্ট সার্ভিস চার্জের মাধ্যমে প্রতিটি সমবায়ী খামারী পোল্ট্রি এক্সটেনশন ওয়ার্কারের মাধ্যমে প্রকৃত এবং দরকারী সেবা এবং পরামর্শ পাবেন।
৫. পোল্ট্রি খামার সমবায়ীরা নিজস্ব অর্থায়নে দুই বা তিন উপজেলা মিলে ডিজিজ ডায়াগনস্টিক ল্যাব এবং ফিড এনালাইসিস ল্যাব গড়ে তুলবেন।
৬. সুনির্দিষ্ট সমবায়ী এলাকায় অনাহুত এবং নিন্ম মানের পোল্ট্রির বিভিন্ন ইমপুট যেন ব্যবহার না হয়, যা উন্নত গুণেরর পোল্ট্রি পণ্য উৎপাদনে বাধার কারণ হয়ে দাঁড়ায় তা মনিটরিং করার জন্য টিম গঠন করতে হবে।
৭. খামারীদের উন্নত মানের পোল্ট্রি পণ্য উৎপাদনের জন্য সমবায়ের উদ্যোগে সময়োপযোগী ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করতে হবে.
৮. উপজেলা ভিত্তিক সমবায় ইউনিটের সদস্যদের নিয়ে জেলা বিভাগ এবং জাতীয় কমিটি গঠনের মাধ্যমে খামারী স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে সরকার, মন্ত্রনালয় বা অন্য সংস্থার সাথে সময়ে সময়ে আলোচনা-পরামর্শ-বার্গেনিং এর উদ্যোগ নিতে হবে।

৯. পোল্ট্রি পণ্যের আভ্যন্তরীণ ভোক্তা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন রকমের প্রোমোশানাল কর্মসূচি এবং বিভিন্ন মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন প্রচারের উদ্যোগ নিতে হবে।।
১০. সমবায়ের মাধ্যমে প্রতিদিনের বাজার মনিটরিং এর যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে।
১১. প্রতিটি সমবায়ী উপজেলাকে নিজস্ব একটা ব্র‍্যান্ড ক্রিয়েট করতে হবে যা তাদের পণ্য সহজে এবং ভ্যালু এডিং এর মাধ্যমে তুলনামূলক বেশী দামে ডিম বা মুরগী বিক্রিতে সহায়তা করবে।
১২. জেলা ভিত্তিক সকল সমবায়ী উপজেলার অংশগ্রহণে পোল্ট্রি খামারী কমিউনিটি রেডিও স্টেশন চালু করতে হবে, যার মাধ্যমে প্রতিদিন পোল্ট্রি খামারিয়া একটি সুনির্দিষ্ট সময়ে দরকারী নানান পরামর্শ পাবেন।
১৩. সমবায়ী খামারীদের মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে এর ফলে উন্নত প্রযুক্তি এবং কৌশল দ্রুত সারা এলাকায় ছড়িয়ে পড়বে।
১৪. পোল্ট্রি খামারী সমবায়ের মূলমন্ত্র হবে” উন্নত খামার ব্যবস্থাপনা,ঝুঁকিমূক্ত পোল্ট্রি পণ্য,কম দামে উৎপাদন এবং প্রতিযোগিতামূলক দামে বিক্রি।।

Please follow and like us:

About admin

Check Also

পোল্ট্রির(ব্রয়লার) প্রসেস ফুড উৎপাদনকারী কোম্পানী ও তাদের প্রোডাক্টসের নাম ও দাম

পোল্ট্রির(ব্রয়লার) প্রসেস ফুড উৎপাদনকারী কোম্পানী ও তাদের প্রোডাক্টসের নাম ও দাম কোম্পানীর নাম ১।সিপি ২।কাজী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »