টার্কি পালনঃবয়স অনুযায়ী খাবার ও জায়গা,রোগ,টিকা, সুবিধা ও অসুবিধা।বিস্তারিত
এটি মূলত উত্তর আমেরিকার পাখি ,স্পেনিশরা এটিকে মেক্সিকো থেকে ইউরোপে নিয়ে আসে এবং গৃহপালিত পাখি হিসেবে পোষ মানায়,তারপর এটিকে সাথে করে বিভিন্ন উপনিবেশ গুলোতে নিয়ে আসে।সবচেয়ে বেশি টার্কি পালন করা হয়। আমেরিকা,কানাডা,জার্মানি,ফ্রান্স,ইটালি,নেদারল্যান্ড,যুক্তরাজ্য,পোল্যান্ড ও ভারত।হাঁস,মুরগি,কোয়েল ও তিতিরের পর টার্কির স্থান।এরা বিভিন্ন কালারের হয় যেমন সাদা,কালো,বোঞ্জ,সিলভার এবং বরবন রেড।মূলত মাংসের জন্য পালন করা হয় তবে বাংলাদেশে অনেকে শৌখিনতার জন্য পালন করে।দেশে প্রায় ২০০ ফার্ম আছে আর টার্কির সংখ্যা প্রায় ২ -৩লাখ,দিন দিন ফার্মের সংখ্যা এবং টার্কির সংখ্যা বাড়তেছে।ফেসবুকে ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যমে টার্কি সবার পছন্দের বিষয় হয়ে দাড়িয়েছিল।লেয়ার,ব্রয়লারের পাশাপাশি বা এককভাবে অনেকে টার্কির দিকে মনোযোগ দিচ্ছিল।
প্রথম দিকে যারা শুরু করেছে অনেকে লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম করেছে।১ম দিকে প্রতি পিস বাচ্চার ৬০০-৭০০টাকা করে বিক্রি করত।বর্তমানে বাজার ভাল না তাছাড়া রোগ ব্যাধির কারণে অনেক টার্কি মারা গেছে।চঅনেকে টার্কি পালন বন্ধ করে দিয়েছে।
টার্কি পালনের সুবিধা;
দেশি মুরগির মত পালা যায়,ব্রয়লার মুরগির চেয়ে দ্রুত বাড়ে।এরা লতা পাতা,ঘাস, কলমিশাক,বাধাকপি,হেলেঞ্চা,বাসার পরিত্যক্ত খাবার,কচুরিপানা এবং দানাদার খবার খায়.টার্কি দেখতে সুন্দর তাই বাড়ি্র শোভা বৃদ্ধি করে।মাংসে প্রোটিন জিংক,লৌহ,পটাশিয়াম,বি৬,ফসফ রাস ভিটামিন ই বেশি আর চর্বি কম।এরা ৭৫% ঘাস খায় আর ২৫% খাবার দিতে হয় এবং রোগ বালাই কম।
তথ্যঃ
২০ সপ্তাহে ওজন পুরুষ ৭ কেজি,মহিলা ৫.৫ কেজি,কোন কোন ব্রিড ১০ কেজি হয়।পুরুষ এবং মহিলার অনুপাত ১ঃ৫,ডিমের ওজন ৬৫ গ্রাম,বাচ্চা ৫০গ্রাম,যৌন পরিপক্কতা আসে ২০ সপ্তাহে।বাজারজাত করার সময়,পুরুষ ১৪-১৫ সপ্তাহে ৭.৫ কেজি আর মহিলা ১৭-১৮ সপ্তাহে ৫.৫ কেজি,এই সময়ে মহিলা খাবে ১৭-১৯ কেজি আর পুরুষ খাবে ২৪-২৬ কেজি।
এখন ২০২২সালে টার্কির ১ দিনের বাচ্চার দাম ১০০টাকা।
আগে দাম ছিল অনেক বেশি যেমন
১ মাসের ১ জোড়ার দাম ৬০০ টাকা
২ মাসের ১ জোড়ার দাম ১০০০ টাকা
৩ মাসে ১ জোড়ার দাম ১২০০ টাকা
৬ মাসের ১ জোড়ার দাম ২০০০ টাকা।
এখন ডিমের দাম ৫০-৬০টাকা(আগে ছিল ১৫০-২০০টাকা)ডিম পাড়া ১জোড়া দেশি টার্কির দাম ১০ হাজার আর ইন্ডিয়ান হলে ৩ হাজার টাকা।বাজার বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম তবে এখন কম।
৭-৮ মাসে মেলের ওজন হয় ৮ -১০ কেজি,১৪-১৫ সপ্তাহে ওজন হয় ৫-৬ কেজি আর খরচ ১২০০-১৫০০ টাকা,১ কেজি মাংসের দাম ৩০০ টাকা( আগে ছিল ৪০০টাকা কেজি),তাহলে ১ টি টার্কির দাম হয় ১৮০০ টাকা ,আর লাভ হয় ৩০০ টাকা।১টি বড় টার্কি মাসে প্রায় ৪-৫ কেজি খাদ্য খায়,দিনে ১৪০-১৫০ গ্রাম।
৩.৫ -৪ মাসে মেল এবং ফিমেল চেনা যায়,বছরে ৮০-১০০ টি ডিম দেয় ,কোন কোন সময় ১২০-১৬০ টি দেয়।।মেল ৮-১০কেজি আর ফিমেল ৫-৬ কেজি হয়।প্রাপ্ত বরস্ক কোন কোন টার্কির ওজন ১৫-২০ কেজি হয়।টার্কি নিজে বাচ্চা ফুটায় তবে দেশি মুরগি বা হ্যাচারিতে ইনকোবেটরে ফুটানো ভাল।১টি মোরগের সাথে ৫টি মুরগি রাখা হয়।
পালন পদ্ধতিঃ
উন্মুক্ত অবস্থায় বা বদ্ধ অবস্থায়দেড় একর জায়গায় ১০০০ টার্কি পালা যায়।উন্মুক্ত অবস্থায় বেশি ওজন আসে এবং ভাল।
বদ্ধ অবস্থায় পালনের সুবিধাঃ
খারাপ আবহাওয়া,চোর,শিকারি রোগ থেকে দূরে থাকে।জমি খরচ কম।শ্রমিক খরচ কম যেহেতু অটো সিস্টেম পানি এবং খাবার পরিচালনা সহজ।
অসুবিধাঃ
হাউজিং এবং ইকুপমেন্ট খরচ বেশি,ঠোকরাঠুকরি বেশি হয় এবং রেস্পিরেটরি ডিজিজ বেশি হয়।ঘন বেশি হলে সমস্যা হয়।
বয়স অনুযায়ী খাবার
খাবার স্টাটার গ্রোয়ার ফিনিশার
বয়স ০-৪সপ্তাহ ৫-৮ ৯-১২ ১৩-১৬ ১৭-২০ ২১-২৪ সপ্তাহ ২৫ এর উপর
এনার্জি ২৮০০ ২৯০ ৩০০০ ৩১০০ ৩২০০ ৩৩০০ ৪৪০০-৪৫০০
প্রোটিন ২৪.৩ % ২৩.২ ২০ ১৬.৫ ১৫ ১২.৮%
১২-১৮ সপ্তাহে ব্রিডারকে কম খাবার দিতে হবে যাতে ওজন বেড়ে না যায়।বডি ওয়েট অনুযায়ী ডিমের ওজন কম এবং ব্রিডারকে বেশি ভিটামিন এবং মিনারেল দেয়া হয়।ব্রীডিং এর টম কে ১৬ সপ্তাহে এবং হেন কে ১৬-১৮ সপ্তাহে সিলেকশন করতে হয়।
ব্রীডারের এনার্জি এবং প্রোটিন লেভেল
বয়স এনার্জি প্রোটিন
০-৪ সপ্তাহ ৩০০০- ২৪%
৫-১৪ ২৯০০ ১৮
১৫-২৫ ২৯০০ ১৩.৫%
২৫ এর উপর ৪০০০ ১৭%
বয়স অনুযায়ী জায়গা,খাবার ও পানির পাত্রঃ
বয়স ০-৪ সপ্তাহ ৫-১৬ ১৬-১৯ ২০-এর উপর
জায়গা ১.২৫ বর্গফুট ২.৫ ৪ ৫বর্গফুট
পানির পাত্র ১.৫ সে মি ২.৫ ২.৫ ২.৫সে মি
খাদ্যের পাত্র ২.৫ ৫ ৬.৫ ৭.৫ সে মি
প্রথমে ২ ইঞ্চি পরে ৩-৪ ইঞ্চি লিটার দেয়া হয়।লিটার হিসেবে নারকেলের ছোবড়া,কাঠের গুড়া,তুষ ও বালি ব্যবহার করা যায়।
ম্যাশ এবং পিলেট ফিড খাওয়ানো হয়।
একটি খাদ্য তালিকা দেয়া হলঃ
ধান ২০%
গম ২০%
ভুট্রা ২৫%
সয়াবিন মিল ১০%
ঘাসের বীজ ৮%
সূর্যমুখী বীজ ১০
ঝিনুক গুড়া ৭
মোট ১০০%
মাটিতে খাদ্য দেয়া ঠিক নয়,পরিস্কার পানি দিতে হবে।মোট খাদ্যের সাথে ৫০% সবুজ ঘাস দেয়া ভাল যেমন কলমি,হেলেঞ্চা,বাধা কপি,ফুলকপি,
পুরুষ টারকিকে টম বলে আর মেয়ে টারকিকে হেন বলে।ব্রিডারের টমকে ১০-১৫টি করে আলাদা রাখতে হয় কারণ এরা মারামা্রি করে,প্রতিটির জন্য ৫-১০বর্গফুট জায়গা লাগে।এদেরকে বেশি ওজন করা যাবেনা তাই খাবার কম দিতে হয় যাতে সিমেনের মান ভাল হয়।হেন ৩২-৩৬ সপ্তাহে ডিম পাড়ে,ডিম পাড়ার পিরিয়ড ৬ মাস ,এই সময়ে এরা ৭৫-৯০ টি ডিম পাড়ে।প্রতি হেনের জায়গা লাগে ৩-৭ বর্গ ফুট,এদেরকে বদ্ধ ঘরে বা সেমি বদ্ধ ঘরে রাখা হয়।টম এবং হেনকে লিটারে পালা হয়,খাচায় ভাল হয় না কারণ খাচায় পালন করলে পায়ে সমস্যা হয়।ডিম পাড়ার সাথে সাথে মানে ৬ -১০ বার ডিম তুলা উচিত কারণ দেরি করে তুললে হেন কুচে হয়ে যেতে পারে।
বাকা পা ,পেন্ডোলাস ক্রপ,হক জয়েন্ট ফোলা,কিলবোন বাকা,ঠোট বাকা এসব সমস্যা থাকলে ব্রীডিং থেকে বাতিল করা উচিত।
এদের কৃত্রিম প্রজনন করানো ভাল হয় কারণ মেলের ওজন ৮-১০ কেজি আর ফিমেলের ওজন ৫-৬কেজি তাই ম্যাটিং এর সময় ইনজুরি হয়।
১০০ ফিমেলের জন্য ৫টি মেল দিলেই হয় যদি এ আই করা হয়।
বছরে প্রায় ৮০-১০০টি ডিম দেয়।২৮ দিন পর ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়।হ্যাচারিতে ঠোট ছেকা এবং পায়ের আংগুলের কিছু অংশ কেটে ফেলা হয় যাতে ঠোকরা ঠুকরি এবং আছড়া আছড়ি করতে না পারে।
ব্রুডিং; মুরগির মতই তবে প্রতি বাচ্চার জন্য জায়গা লাগবে ১ বর্গফুট ।
লাইটিং;যদি ডিম পাড়া মানে ব্রিডার হিসেবে পালন করা হয় তাহলে লেয়াররের মত লাইট দিতে হবে।
রোগঃ
সালমোনেলোসিস(সালমোনেলা এরিজোনা) সালমোনেলা মুক্ত ব্রিডার থেকে আনতে হবে।
প্যারাটাইফয়েড(সালমোনেলা পুলোরাম)
এ আই
এরিসিপেলাসঃ হঠাত মারা যায়,মুখের রং পরিবর্তন
নিউমোনিয়া
ব্লেক হেডঃ(হিস্টোমোনিয়াসিস) ১২ সপ্তাহের কম বয়সে হয়।পানি বেশি খায়।বেশি মারা যায়।
ব্লুকম্ব বা টার্কি কড়োনা ভাইরাসঃ শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়।হঠাত মারা যায়,মৃত্য হার ৫০-৯০%।
কলেরাঃ মৃত্য হার ৬০-৯০%,৬ সপ্তাহের বেশি বয়সে হয়,পানি বেশি খায়।
আমাশয় ও রানিক্ষেত মাইল্ড রুপে হয়।
কৃমি( গেপ ওয়াম বা রেড ওয়াম,),
নাভিকাচা।
সাইনোসাইটিস (ব্যাক্টেরিয়াল ডিজিজ)
মাইকোপ্লাজমোসিসঃমাইকোপ্লাজমা গ্যালিসেপ্টিকাম ও সাইনোভি(১০-১২ সপ্তাহে বেশি হয়)
হেক্সামাইটিয়াসঃ ৩-৮ সপ্তাহে হয়।
মাইকোটক্সিকোসিস
টার্কির যৌন রোগ(মাইকোপ্লাজমা মেলিয়াগ্রেডিস) ফারটিলিটি ও হ্যাচিং রেট কমে যায়।
টার্কি করাইজা(ব্রডেটেলা এভিয়াম)
পক্স এবং মাইটস এবং উকুন।লিউকোসাইটোজোয়ান
পায়ের বিভিন্ন রোগ ;প্যারলাইসিস
মেরেক্স,গাম্বোরু ও ব্রংকাইটিস তেমন হয় না।
টিকাঃ
২-৫ দিন রানিক্ষেত চোখে ফোটা
৫-৭দিন পিজন পক্স
৪ সপ্তাহে রানিক্ষেত
৫ সপ্তাহে মাইকোপ্লাজমার ডোজ
৭-৮ সপ্তাহ কৃমি নাশক ও করাইজা
(টার্কির করাইজার টিকা বাংলাদেশে নাই)
৮-৯ সপ্তাহে কলেরা
৯ সপ্তাহ মাইকোপ্লাজমার ডোজ
৯-১০ সপ্তাহ রানিক্ষেত
১৪-১৫ সপ্তাহ কলেরাও করাইজা
১৬ সপ্তাহে কৃমিনাশক ও মাইকোপ্লাজমার ডোজ
২৪ সপ্তাহ কৃমিনাশক
প্রতি ২ মাস পর পর কৃমিনাশক দিতে হবে।
প্রধান সমস্যাঃ
বিভিন্ন রোগ ব্যাধি(রোগের কারণে ১ বছরে প্রায় ২০% টার্কি কমে গেছে)।ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ধারণা কম বিশেষ করে খাবার, লাইটিং ,ওজন,ফিড ফরমুলেশনে ধারণা নেই।সঠিক টিকা সঠিক ভাবে দেয় না এবং সব টিকা পাওয়া যায় না।পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব।সাধারন জনগণেরর কাছে এখনও গ্রহণযোগ্যতা পায়নি মানে মাংস সবাই খায় না।অভিজ্ঞ লোক এবং ডাক্তারের অভাব।
সম্ভাবনাঃ
অনেক এলাকায় প্রচুর খালি জায়গা পড়ে আছে।রোগ বালাই তুলনামূলক ভাবে কম।দেশে কোটি কোটি বেকার যুবক যুবতী।ব্যাপক প্রচারণা যাতে মাংসের বাজার তৈরি হয়।।গরু,ব্রয়লার ও খাসির মাংসের বিকল্প।খরচ কম।