আমিষ জাতীয় খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন বনাম গ্রামীণ কর্মসংস্হান সৃষ্টি ও জাতীয় অর্থনীতির ভীত সুদৃঢ়করণ।
খাদ্য ঘাটতির দেশ আজ দানাদার খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও আমিষ উৎপাদনে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। সরকারের দৃষ্টিভঙ্গী, দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও সেবাখাত আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভরতা থেকে পিছিয়ে পরায় আমিষ উৎপাদনে কাংখিত অর্জন সম্ভব হয়নি। শুধু দানাদার খাদ্য নয় ডাল,পিয়াজ, রসুনসহ নিত্য প্রয়োজনীয় ত্রিশটি খাদ্যপণ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্জন আবশ্যক ও জরুরী।দানাদার খাদ্য সামগ্রী উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি আমিষ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্জন জনগনের প্রয়োজনে ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে আজ সময়ের দাবি। পৃথিবীর সকল ক্ষেত্রে পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে। জলবায়ু, পরিবেশ, ভূমি ব্যবস্থাপনা,খাদ্য গ্রহণ, নদীর গতিপথ, পানি ব্যবস্থাপনা এমনকি গবাদি পশু পালন পদ্ধতিও আজ আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর।পৃথিবীর অনেক দেশ অস্ত্র সাহায্য দিতে আগ্রহী হলেও খাদ্য সাহায্যে আগ্রহ দেখায় না। খাদ্য সংকটে অনেক দেশের সরকার পরিবর্তনেরও ইতিহাস অজানা নয়। সকল অস্ত্রের বড় অস্ত্র খাদ্য অস্ত্র।সারা পৃথিবীতে অস্থিরতা, যুদ্ধাব্যবস্থা বিরাজিত থাকায় সরকারকে খাদ্য নিয় ভাবতে হবে এবং সকল ক্ষেত্রে এক বা দুবছরের খাদ্য মজুরসহ স্বনির্ভরতা অর্জনে বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা ও বাস্ববায়নের রুপরেখা নিয়ে ভাবার সময় এখনি।
আমিষ খাদ্যের প্রধান উৎস ডিম,দুধ,মাছ ও মাংস। মাছ উৎপাদনে নদী নালা,খালবিল,হাওর বাওর,পুকুর ও সামদ্রিক মাছ চাষে দেশ অনেক এগিয়ে থাকলেও চাহিদার তুলনায় খানিকটা পিছিয়ে রয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে খাদ্য গ্রহন ও খাদ্য ব্যবস্থাপনার ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যায় উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলিতে।এর ফলে চাহিদার গতি উর্ধমুখী হয়াই বাস্তবসম্মত। গ্রামীণ জনগোষ্ঠির ব্যাপক কর্মসংস্হান ও মধ্যম মাত্রার প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বল্প ভূমিতে গবাদি পশু পাখি পালন করে আমিষ উৎপাদনে বাংলাদেশ রেকর্ড সৃষ্টি করতে পারে। এ ক্ষেত্রে সরকারকে স্বল্প শিক্ষিত গ্রামীণ জনগোষ্ঠিকে কাজে লাগাতে হবে। গবাদি পশুপাখি পালনে গ্রামীণ লোকজনের যথেষ্ট দক্ষতা রয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তিগত সুবিধা ও সেবারমান গ্রাম পর্যায়ে স্থানান্তরিত করে পশুপাখি পালনের উপকরণ সরবরাহ করতে পারাটাই হবে উৎপাদনের মূলকরনীয়।
আধুনিক প্রযুক্তিগত সেবারমান গ্রামীণ পর্যায়ে সম্প্রসারণ করতে হলে প্রয়োজন হবে এ বিষয়ে দক্ষ জনশক্তি।বর্তমানে বছরে ১২টি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ থেকে প্রায় ১২০০ আধুনিক প্রযুক্তিগত জ্ঞান সম্পন্ন ভেটেরিনারী গ্রাজোয়েট বের হচ্ছে। এই উচ্চ শিক্ষিত গ্রাজোয়েট কাজে লাগিয়ে গ্রামীণ অর্থনীতির ভীত সুদৃঢ় করা যায় অতি সহজেই। গ্রামীণ অর্থনৈতিক কর্মকান্ড গতিশীল করা হলে শহরে অমানবিক জীবন যাপনের জন্য লোকজন শহরমুখী হবে না। নিজ গ্রামে স্বাবলম্বী হয়ে ডিম,মাছ,মাংস ও দুধে ভাতে ডাবল ডিজিট জিডিপির অর্থনীতির গর্বে গর্বিত হতে পারে। এজন্য প্রয়োজন মহতী উদ্যোগ ও আন্তরিক উন্নয়ন প্রয়াস। আমি সরকারকে একটি উন্নয়ন ভাবনার প্রস্তানা দিতে চাই। আমি শতভাগ নিশ্চিত প্রস্তাবিত উন্নয়ন প্রয়াস বাস্তবায়ন করা হলে বাংলাদেশ আমিষ উৎপাদনে কাংখিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সফল হবে। গ্রামীণ জনগনের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা রয়েছে গবাদি পশু পাখি পালনের। এ জন্য প্রয়োজন প্রযুক্তি হস্তান্তর ও গবাদি পশুপাখি পালনে সার্বিক সহায়তা প্রদান। গবাদি পশু পাখি পালনে গ্রামীণ জনগনের প্রধান অন্তরায় রোগবালাই থেকে গবাদি পশু রক্ষা, বাজারজাতকরণ ও ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি। এ জন্য সরকারকে সেবা কার্যক্রম গ্রামীণ পর্যায়ে স্থানান্তরে দক্ষ জনশক্তিকে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিতে হবে। এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে প্রয়োজন ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কার্যক্রম সম্প্রসারণ। এক্ষেত্রে গবাদি পশুপাখি পালনে গ্রামীণ জনগোষ্ঠির প্রধান অসুবিধা পশু পাখীর মৃত্যুর আশংকা হ্রাসে আধুনিক রোগ ব্যবস্থাপনা সেবা কার্যক্রম ইউনিয়ন পর্যায়ে সম্প্রসারণ। গ্রামীণ অর্থনীতিক ও সমিষ্টিক উন্নয়নে গবাদি পশুপাখি পালনের কোন বিকল্প নেই। এ জন্য সরকারকে সেবারমান সম্প্রসারনে ইউনিয়ন পর্যায়ে ১।একজন ভেটেরিনারি অফিসার ২। তিনজন উপসহকারী কর্মকর্তা ৩। তিনজন ড্রেসার কাম ভ্যাকসিনেটর ৪। একজন অফিস সহায়ক ও ৫।একজন নৈশ প্রহরীসহ অন্যান্য সুযোগসুবিধা সমেত প্রকল্পের মাধ্যমে সেবা কার্যক্রম শুরু করা।
এর ফলে কর্মহীন যুবক যুবার কর্মজীবজীবিকার সুযোগ হবে।