প্রবাসিগন কেন খামার করবেন এবং কেন করবেন নাঃ পর্ব~০২
সিলেটের অধিকাংশ খামারের মূল বিনিয়োগকারীগন হলেন লন্ডন প্রবাসী। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তাদের অবদান অনস্বীকার্য। আমি প্রায়শই লন্ডন থেকে অনেক ফোন পাই। ফোনের উদ্দেশ্য খামার ভিজিট করে তাদের আপডেট ও করনীয় সর্ম্পকে অবগত করা। আমার ক্ষুদ্র পর্যক্ষেনে যে ধরনের খামারী পাওয়া যায় তার হলেন ~
১ম) যিনি নিজে পরীশ্রমী হয়ে কাজ করেন এবং খামার দেখাশুনা নিজে করেন কিংবা বিনিয়োগ অনুপাতে কাজের লোক নিয়ে খামার পরিচালনা করেন; তারা আনুপাতিক হারে ভালো করেন।
২য়) যাদের উপর খামার ভর করেছে কিংবা চেপে বসেছে তাদের অবস্থা হ য ব র ল। চেপে বসেছে মানে হলো তারা লন্ডনে অবস্থানরত প্রবাসির খায়েসের কিংবা স্বপ্নের স্বীকার। তার নিজের খামার করার কোন ইচ্ছে কোন কালেই ছিলোনা; তিনি খামারের কাজকে ডার্টি জব মনে করেন কিন্তু বাধ্য হয়ে তিনি খামার করে যাচ্ছেন; খামারের রুটিন কাজে তিনি মন দিতে পারেন না,স্বভাবতই দিনদিন লসের পাল্লা ভারি হচ্ছে। ওদিকে প্রবাসীর মনে হবে শালার এ সেক্টরে ইনবেস্ট করে ভুল করলাম নাতো?
৩য়) তারা অনলাইনের মধ্যস্বত্বভোগির স্বীকার! ইউটিউব খুললেই তারা দেখতে পারছেন ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালন করে মাসে ১’৫ লক্ষ টাকা ; কিংবা কবুতর পালন করে লাখপতি; কিংবা একটি গাভি থেকে একশটি গাভির মালিক!! ইউটিউবের চটকদার উপস্থাপনার কবলে পরে সবাই খামারী হবার স্বপ্নে বিভোর; আর তাদের স্বপ্নকে পুজিঁ করে স্বপ্ন ফেরিওয়ালাদের বিছানো জালে আস্টে পৃষ্টে জড়িয়ে যাচ্ছেন। অনলাইনে গরু কিনতে গিয়ে অনেকেই খামার করার আগেই বিনিযোগ খুইয়েছেন কিংবা দশলাখ টাকার গাভি বিশ বা পচিঁশ লাখ টাকায় কিনেছেন। তার উপর নির্দিষ্ট প্ল্যান না থাকার কারনে সবগুলোই হচ্ছে লস প্রজেক্ট। আর আমাদের দায় হলো সেখান থেকে তাদের উদ্ধার করা !!
সেই দায় থেকেই আমি ছুটে যাই তাদের খামারে কিংবা কিঞ্চিত লেখালিখি করে তাদের সজাগ রাখতে চেষ্টা করি। কারন আমি মনে করি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অল্প টাকায় পড়াশুনা শেষ করে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করে তাদের দেয়া রেমিট্যান্স কিংবা সাধারণ মানুষের দেয়া করের টাকায় বেতন তুলে খেয়ে পরে ভালো থেকে তাদের প্রতি দায়বদ্ধ থাকা উচিত। এজন্য যদি কারো বাড়া ভাতে ছাই ছিটানো হয় তবে আমার বলার কিছু নেই।
আমার একটি লিখা ছিলো “আপনি কেন খামার করবেন না” আশা করি তাতে অনেক উত্তর পেয়েছেন।
তো মূল প্রসঙ্গে আসি আমি বিগত বুধ ও বৃহঃপতিবার দুটি খামার ভিজিট করি এনিয়েই আজকের মূল আলোচনা; প্রথম খামারে যাবার সময় ভদ্রলোককে ফোন করি তিনি যেন রাস্তার পাশে দাড়ানো থাকেন; প্রতিউত্তরে তিনি জানালেন তিনি খুব ব্যস্ত; তবে আমি রওয়ানা দেবার পর যেন তাকে ফোন করি তখন তিনি রওয়ানা দেবেন। উল্লেখ্য তিনি সিলেটে একটি ছোটখাটো ব্যবসা পরিচালনা করেন। যাই হোক আমাদের দেখা হলো। পথে যেতে যেতে তাকে বললাম; বলুনতো আপনাদের রিসোর্সগুলো কি কি? উনি থতমত খেয়ে গেলেন তখন আমি বললাম মানে বলতে চাচ্ছি খামার করতে চাচ্ছেন তো আসলে আপনার কি কি আছে যা খামার করতে কাজে লাগবে। উনি বললেন খামার আমি করবোনা আমার ছোট ভাই করবে সে লন্ডনে থাকে আর বড় ভাই দেখাশুনা করবেন। বড় ভাই অসুস্থ তাই তিনি নিজে এসেছেন। আমি খামারে ঢুকলাম; দেখলাম শেডের কাজ এখনো শেষ হয়নি। লাখ পাচেঁক খরচ হয়েছে; আরো কিছু লাগবে। বললাম কত খরচ হয়েছে ; তিনি জানালেন জমি ক্রয়সহ চৌদ্দ লাখ! মানে হলো এখনো খামার শুরুই হয়নি চৌদ্দ লাখ শেষ! এই অবস্থায় যা হয় তা হলো সম্ভবত তার ইনিশিয়াল ইনবেস্ট শেষ এবার জোড়াতালি দিয়ে খামার শুরু করবেন; মানে হলো আরো লাখ দশেক দিয়ে শুরু করবেন। সিলেটে দশলাখে চার/পাচটির বেশি গরু পাবেন না। মানলাম তা দিয়েই শুরু করবেন। যাক আমি তাকে বললাম আপনার ঘাসের জমি কতটুকু? তিনি পাশেই দেখালেন কিছুটা জমি ; টেনেটুনে বিঘা খানেক হবে? আমি বললাম আপনাদের কতটা গরুর প্ল্যান ? তিনি বললেন বিশটা! আমি টাশকিত হলাম। বললাম আপনাকে মিনিমাম সাত বিঘা ঘাসের জমি ম্যানেজ করতে হবে। আর শুকনো দুই বিঘা। তিনি টাশকিত হলেন ; উনার টাশকিত বদনের দিকে চেয়ে বললাম আপনি ঘাসের জমি ছাড়াও খামার করতে পারবেন তবে তা অবশ্যই লস প্রজেক্ট হবে। কারন বাজারে দানাদারের আগুন দামের সাথে আপনি পেরে উঠবেন না। প্রসঙ্গ পাল্টে আমি বললাম আপনার বড়ভাই কি খামারের কাজ করতে পারবেন? উনি জানালেন লোক রেখে খামার পরিচালনা করবেন! আমি জানতে চাইলাম আপনাদের এলাকায় কাজের লোক কেমন পাবেন? উনি জানালেন এটাই মূল সমস্যা; কাজের লোক বাইরে থেকে আনতে হবে; লোকাল লোকজন এসব কাজ করবেন না। কিছক্ষন পরপর তিনি মোবাইলে তাকাচ্ছেন তার মানে উনার তাড়া আছে; আমি তা দেখে বললাম গরু যখন অসুস্থ হবে সময় মতো ডাক্তার নাও পেতে পারেন তখন কিন্তু আরো বেশি সময় আপেক্ষারত থাকতে হবে।
মনে হলো আমার আলোচনায় তিনি খুশি হতে পারলেন না; উনার ভাইকে ফোন দিলেন। ফোনে বলছেন: আমি বলছিনা এসব ঝামেলার দরকার নাই! লন্ডন থেকে খালি ফোন দিলেই হলো; আজাইরা ঝামেলা কে করবো? এবং একফাকে তিনি আমার থেকে একটু দূরে সনে গেলেন এবং পরবর্তী আলোচনা শেষ করলেন।
বিদায় নেবার সময় আমি জানালাম; আপনারা ঘাসের জমি ও কাজের লোক ঠিক না করা পর্যন্ত খামারের বাকি কাজে আর টাকা নষ্ট করবেন না। এগুলো ম্যানেজ হলে আমাকে জানাবেন আমি বাকি প্ল্যান করে দেব।
আমার মতামত হলো এ খামার জীবনেও লাভ করতে পারবেনা; তার কারন হলো যারা খামার পরিচালনা করবেন তারা খামার সর্ম্পকে কিছুই জানেন না; তাদের গরুর প্রতি আবেগ কিংবা ভালোবাসাও নেই। শুধু লন্ডনে থাকা ভাইয়ের জন্যই খামার করতে বিধায় খামার করবেন।
আমার দ্বিতীয় ভিজিট হলো ঈদগাহ বাজার , নাজিরপুর। এটিও এক লন্ডনী ভাইয়ের ফোন পেয়ে যাওয়া। তিনি হলেন ছবিতে বর্ণিত Rabel Ahmed Bakr তিনি দক্ষিণ সুরমার একজন খামারী। উপজেলা থেকে তার বাড়িতে যেতে প্রায় ৪০ কিমিঃ ঘুরপথে যেতে হয়। এটারও মূল বিনিয়োগকারী লন্ডনে থাকেন। তবে এর পজিটিভ দিক হলো Rabel ahmed নিজে পরিশ্রমী; গরুর প্রতি তার ভালোবাসা আছে। আমাদের উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে তিনি কিছু ঘাসের কাটিং সংগ্রহ করেছেন; তার হাফ বিঘা জার্মান ঘাসের জমি আছে। আমি তার পুকুর পাড় দেখলাম এবং খামারে আশপাশে তার অনেকটা খালি জায়গা দেখলাম। বললাম তাতে পাকচং কিংবা লাগাতে। আর জার্মান ঘাসের জন্য আরো বিঘা পাচেঁক জমি রেডি করতে। রাবেল জানালো তিনি জমি রেডি করতে পারবেন; আমি যেন কাটিং এর ব্যবস্থা করে দিই। দুধ বিক্রি নিয়ে তার সমস্যা ছিলো; উপস্থিত একটি সমাধান দেবার চেষ্টা করেছি।
আমার ব্যক্তিগত মতামত হলো উনি টিকে যাবেন। কারন নিজে পরিশ্রম করেন; দুধ দোহন করতে জানেন; ঘাসের জমি আছে; নিজে নিজে ইনজেকশন করতে পারেন; শিক্ষিত তরুন এবং ইনোবেশন গুলো এডপ্ট করতে পারবেন তাছাড়া এক্সট্রা লেবার লাগবেনা কারন যারা তাদের ধানী জমি দেখাশুনা করেন তারাই কাকি সময় খামারের কাজে সহায়তা করতে পারেন।
ডাঃ মোঃ জোনায়েদ কবীর
ভেটেরিনারি সার্জন
এবং
এডমিন
ডেইরী ফার্মারস অব বাংলাদেশ গ্রুপ।