কোয়েল পালন ঃবিস্তারিত(অল্প সময়ে অল্প টাকায় ব্যবসা)
কিছু তথ্য
আকারে পোল্ট্রি জগতে এরা সবচেয়ে ছোট.
বয়স্ক মেল কোয়েলের ওজন ১৫০-১৮০,ফিমেল কোয়েলের ওজন ১৮০-২০০গ্রাম,বাচ্চার ওজন ৫-৭ গ্রাম এবং ডিমের ওজন ১০-১৫ গ্রাম।
মুরগির ১টা ডিম কোয়েলের ৫টি ডিমের সমান।
কোয়েল কবুতরের চেয়ে ছোট।
ডিমের খোসা স্পটেট,হোয়াইট টু ব্রাউন।
কুসুম ও এলবুমিনের অনুপাত ৩৯ঃ৬১।যা মুরগি থেকে বেশি তাছাড়া কোলেস্টেরল কম।
কোয়েল বছরে ২৮০-৩০০ ডিম পাড়ে,৯৫-৯০%,পরের বছর ৫০% পাড়ে।
ডিমে প্রোটিন,ফসফরাস,ভিটামিন এ,বি১,বি২ বেশি থাকে,ফ্যাট কম থাকে.
৬-৭ সপ্তাহে ডিম পাড়া শুরু করে.
১৬-১৮ দিনে ডিম ফুটে বাচ্চ বের হয়.
কোয়েল নিজের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটায়না তাই ইনকুবেটরে ডিম ফোটাতে হয়,ডিম ফোটাতে হলে ৫ টি স্ত্রী এর সাথে ১ টি পুরুষ দরকার
বিকাল ও সন্ধ্যায় ডিম পাড়ে,ডিমের ওজন ১০-১২ গ্রাম
কোয়েল পালনের সুবিধাঃ
অল্প পুজি।অল্প পরিশ্রম,অল্প জায়গা।অল্প খাবার এবং অল্প সময়ে রিটারন চলে আসে।
সাইজের তুলনায় অনেক শক্ত পাখি এবং হাইলি রিপ্রডাক্টিভ পটেনশিয়াল।
৪-৫ সপ্তাহে মাংস হিসেবেও বিক্রি করা যায়।
প্যাগনেন্ট মহিলা ও অসুস্থ মহিলার জন্য বেশি উপকারী।
১টি মুরগির জায়গায় ৮-১০টি কোয়েল পালা যায় মানে ১ বরগফুটে ৪ টি কোয়েল পালা যায়।
১০০০ বরগফুটে ৪০০০ কোয়েল পালা যায়।
তাছাড়া ২৩০০০-২৬০০০ টাকায় ১০০০ কোয়েল পালার খাচা পাওয়া যায় যা অল্প জায়গা লাগে।
১জন ৪০০০ কোয়েল পালতে পারে।
দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং ডিম পাড়ে।
ডিমের দাম কম তাই সবাই কিনে খেতে পারে।
বাসস্থানঃ
আলো বাতাসযুক্ত এবং বায়ুচলাচল করে এমন জায়গা ভাল।
খাচা এবং লিটার দুইভাবেই পালা যায়।
৪ সপ্তাহে মেল ফিমেল আলাদা করে দিতে হয়।
খাচাঃ
খাচায় রোগ বালাই কম হয়,১০০০ কোয়েলের জন্য ২৩০০০-২৬০০০ টাকার খাচা লাগবে।
লিটারে পালন করলে নেট দিয়ে আটকিয়ে রাখতে হবে কারন কোয়েল উড়ে চলে যেতে পারে।
খাচায় রুগবালাই কম এবং পালন সহজ।
মেঝেতে ১টি বাচ্চার জন্য ১০০ বরগ সেমি এবং বড় কোয়েলের জন্য ২৫০ বরগ সে মি জায়গা লাগে।
খাচায় ১টি বাচ্চার জন্য ৭৫ বরগসেমি এবং বড় কোয়েলের জন্য ১৫০ বরগ সে মি।
খাচায় ৫০ টি বড় কোয়েলের জন্য দৈঘ্য ১২০ সেমি,উচ্চতা ৩০ সেমি,প্রস্ত ৬০ সেমি,খাচায় মেঝের জালি হবে ১৬-১৮গেজ,নেটের ফাক ৩ সপ্তাহ পর্যন্ত ৩মিমি বাই ৩মিমি এবং বড় কোয়েলের জন্য ৫ মিমি বাই ৫ মিমি।
খাচায় একপাশে পানি এবং একপাশে খাবার দেয়া হয়।
২সপ্তাহ বয়সে খাচার মাপ ৩*২.৫*১.৫ফুটঃ১৩.১২৫ফুট জায়গায় ১০০কোয়েল রাখা যায়।
৩ সপ্তাহে খাচার মাপ ৪*২.৫*১.৫ফুটঃ১৫ফুট জায়গায় ৫০টি কোয়েল রাখা যায়।
খাচা ৬ফুট লম্বা আর প্রস্থ ১ফুট।খাচা ৬ তলা পরযন্ত করা যায়।
খাচার নিচে ১টা পাত্র থাকে যা দিয়ে লিটার সরিয়ে ফেলা যায়।
১ইউনিটে ১০-১২টি কোয়েল রাখা হয় সাথে ২-৩টি মেল দেয়া যায়।
লিটারঃ
মেঝেতে হলে ২-৩ ইঞ্চি করে লিটার দিতে হয়।লিটার যাতে ভিজে না যায় সেজন্য পানির পাত্র শুকনা হাডবোডের উপর দেয়া ভাল।ভিজে গেলে বদলাতে হবে।
১ বরগফুট জায়গায় ৬টি কোয়েল পালা যায়।
২ সপ্তাহের পর খাচায় পালা ভাল এতে ওজন ভাল আসে।
খাবারঃ
বড় কোয়েল ২০-২৫গ্রাম খাবার খায়।
খাবার হিসেবে ডিম আসার আগে ব্রয়লার খাবার এবং ডিম পাড়া শুরু হলে লেয়ার খাবার খাওয়ানো হয় তবে লেয়ার খাবার দিলে ভেংগে গুড়া করে দিতে হবে, ব্রয়লার প্রিস্টাটার বা স্টাটার খাবার দিলে সাথে পাথর মিশিয়ে দেয় দিতে হবে(১০০কেজিতে ৭-৮কেজি),কোয়েলের জন্য আলাদা খাবার তেমন পাওয়া যায়না।
৫সপ্তাহে প্রতি কোয়েল ৫০০গ্রাম খাবার খায়।
১২টি তৈরিতে ৪০০গ্রাম খাবার লাগে।
৬মাস বয়সের পর ২৫গ্রাম খাবার দিতে হয়।
বাচ্চার খাদ্যে ২৭% আমিষ এবং বড় কোয়েলের জন্য ২২-২৪% আমিষ লাগে।
বয়স অনুযায়ী খাবার,প্রোটিন,এনার্জি
বয়স খাদ্য আমিষ এ্নার্জি
০-৩ সপ্তাহ স্টাটার ২৭% ২৮০০কিলোক্যালরি
৪-৫ গ্রোয়ার ২৩% ২৭০০
৬-বিক্রি লেয়ার বা ব্রয়লার ২২-২৪ ২৫০০-২৭০০
আলোঃ
শীতকালে দিনের আলো কম হলে কৃত্রিম আলো দিতে হবে।মোট ১৬ ঘন্টা আলো দিতে হবে দিন +রাত)
বয়স তাপমাত্রা,সেলসিয়াস আলো,ঘ ন্টা
১সপ্তাহ ৩৫ ২৪
২ ৩০ ২৪
৩ ২৫ ১২
৪ ২১-২২ ১২
৫ ২১ ১২
৬ ২১ ১৩
৭ ২১ ১৪
৮ ২১ ১৫
৯ ২১ ১৬
৯ আপ ২১ ১৬
বাচচা ও ব্রিডার কোয়েলের ব্যবস্থাপনাঃ
বাচচা অবস্থায় তাপমাত্রা খুব বেশি দরকার ,তাপ যদি কম হয় তাহলে বাচচা মারা যায়।
৫০০ ব্রিডার কোয়েল থেকে সপ্তাহে ১৫০০ বাচচা পাওয়া যায়।
ফ্লোরে মেল ফিমেলের অনুপাত ১ঃ৫।
৬-৭ সপ্তাহে ডিম পাড়া শুরু করে এবং ৮সপ্তাহে ৫০% ডিম পারে,১০ সপ্তাহে ৮৫-৯০% ডিম চলে আসে।
৬ সপ্তাহে পুরুষ কোয়েলের ওজন হয় ১২৫-১৫০গ্রাম আর মহিলা কোয়েলের ওজন ১৭৫-২০০গ্রাম।
পুরুষ এবং স্ত্রী চেনার উপায়
মাংসের জন্য পুরুষ আর ডিমের জন্য স্ত্রী।তাই ডিমের জন্য পালতে হলে পুরুষ আলাদা করতে হবে।
১দিন বয়সে ভেন্ট দেখে চেনে যায় কিন্তু
২ সপ্তাহের পর পুরুষ কোয়েলের র্বুকের পালকের রং গাড় বাদামি এবং বুক সরু হয়।
স্ত্রী কোয়েলের বুকের রং সাদা এবং কালো ছোপ ছোপ থাকে।বুক বড় হয়।
রোগঃ
রোগ কম হয় তাই টিকা লাগেনা,তবে হঠাত আবহাওয়া বদলালে কিছু রোগ হয় যেমন;
১।আমাশয়ঃ
পায়খানার সাথে রক্ত আসে ,আইমেরিয়া বাটেরি,উজুরা এবং সূনুডা ইত্যাদি
২।আলসারেটিভ এন্টারাইটিস(কোয়েল ডিজিজ),
এতে প্রায় ১০০% মারা যেতে পারে।
রক্ত পায়খানা এবং সিকাল ও নাড়িভুড়িতে ক্ষত দেখা যায়,চোখ বন্ধ হয়ে যায়।
টেট্রাসাইক্লিন পানিতে দিতে হয় ১ গ্রাম ১-২ লিটর পানিতে।
জিংক ব্যাসিট্রাসিন পানিতে বা খাবারে দেয়া ভাল।
৩।নিউমোনিয়া
জ্বর আসে এবং শ্বাস কষ্ট হয়
তুতে খাওয়াতে হবে ১ গ্রাম ৩ লিটার পানিতে ১বেলা।
৪।ব্রংকাইটিস;
এতে ৮০% মারা যেতে পারে।৩ সপ্তাহ পর্যন্ত ঠান্ডা থাকতে পারে।
৫।কলিসেপ্টিসেমিয়া
১৫% মারা যায়।
মুখ হা করে থাকে,নাকে মুখে ফেনা হয়।
৬।করুনা ভাইরাল এন্টিরাইটিস
পাতলা পায়খানা,খাবার কম খাবে,ডিম কমে যাবে,খোসা খস খসে হবে।
৭।ওম্ফালাইটিস।
বাচ্চাতে হয়
৮।কৃমি এবং মাইট
লিটারে পালন করলে হতে পারে ,খাচায় পালন করলে হয় না।নরমালি কৃমি কম হয়।
৯।কার্ল টু প্যারালাইসিস;
পা বাকা হয়ে যায়,বি২ এর অভাবে হয়
১০।ক্যানাবলিজম;
অতি আলো, অতি তাপ ।বেশি ঘন,আরজিনিন এর ঘাটতি,অতি ধকল,পানির এবং খাবার পাত্র কম হলে ঠোকরা ঠুকরি করে এমন কি অনেক কোয়েল আহত হয়ে মারা যায়।
১১।ডিম আটকে যাওয়া;
কারণ বড় ডিম,ডিম্বাশয়ে কোন রূগ,খসখসে ডিম,শরীরে বেশি চর্বি ।
লাইটিং সিডিউল ঠিক মত না মানা।
১২,ব্রিডার কোয়েল কে ভিটামিন ও মিনারেলের ঘাটতি বেশি হয় ফলে বাচচা প্যারালাইসিস হয় এবং অনেক মারা যায়।
১৩।রানিক্ষেত
কোয়েলের যতগুলো রোগ হয় তার মধ্যে ১২% রানিক্ষেত দ্বারা আক্রান্ত হয়।
১৪ মেরেক্স
১৫ মাইকোপ্লাজমোসিস
১৬।গাম্বোরু
১১-৪০ দিনে বেশি হয় এবং বর্ষাকালে বেশি হয়।
১৭ করাইজা
১৮।সালমোনেলোসিস
১৯।এন্সেফালোমায়েলাইটিস
২০।পক্স
কলিব্যাসিলোসিস ,সালমোনেলোসিস এবং রানিক্ষেত বেশি হয়।তারপর আমাশয়,মাইকোপ্লাজমোসিস ও নেক্রোটিক এন্ট্রাইটিস হয়।
টিকা
৩-৫দিন আই বি +এন ডি
৭দিনে গাম্বোরো
১৪দিনে গাম্বোরো
৬০দিন পর পর লাইভ রানিক্ষেত টিকা পানিতে
বাচ্চার দামঃ
১দিনের বাচ্চা্টার দাম ৬-৮টাকা
৩-৪ সপ্তাহে ৩০-৩৫ টাকা
ডিম পাড়া অবস্তায় ৬ সপ্তাহে ৫০-৫৫ টাকা।
ঘরঃ
২০০০ কোয়েলের জন্য ৪৩২ বর্গফুট জায়গার দরকার।
ঘরের খরচ হবে আনুমানিক ১ লাখ টাকা।
এবং খাবার পাত্রের খরচ হবে আনুমানিক ৬০০০টাকা,
ইলেকট্রিকেল ১০০০টাকা,
পরদা ৫০০০ টাকা
খাবার পাত্র ২৫ টির জন্য ১টি এবং পানির পাত্র ৫০টির জন্য ১ টি,
ছোট সময় ১০০ টির জন্য ১ টি খাবার এবং পানির পাত্র লাগবে।
১ দিনের বাচ্চা ৮ টাকা,৩-৪ সপ্তাহের বাচ্চা ৩০ টাকা,পুরুষ হলে ২১-২২ টাকা,ডিম পাড়া অবস্তায় ৫০টাকা,
লাভঃ
২০০০ কোয়েল পাখির জন্য ডিম পাড়া অবস্তায় লাভ ঃ
দিনে খাবার ৪৪ কেজি* ৩৪; ১৫০০টাকা
বিদ্যুৎ মাসে ৬০০ হলে দিনে ২০
মেডিসিন মাসে ৩০০০ হলে দিনে ১০০
কর্মচারী ২৬০( নিজে পালন করলে লাগবে না,এমনি ধরে হিসেব করলাম)
টোটাল; ১৮৮০ টাকা
ডিমের দাম ১৬০০(৮০% ধরে)*২; ৩২০০টাকা (অনেক সময় দেড় টাকা থেকে আড়াই টাকা হয়)
তাহলে দিনে লাভ ৩২০০-১৮৮০ টাকা ১৩২০ টাকা
তাহলে মাসে ৩৯৬০০টাকা
কিন্তু দাম যদি ১.৫ টাকা হয় ১৬০০* ১.৫;২৪০০টাকা
তাহলে লাভ হবে ২৪০০-১৮৮০;৫২০ টাকা মাসে ১৫৬০০ টাকা
আর নিজে কাজ করলে ৮০০০ টাকা যোগ হবে মানে ২৩৬০০ টাকা
মাসে ৩০*১৭৮০
১ জন লোক ৩০০০-৪০০০ পালন করতে পারে তাতে লাভ বেশি হবে, তাছাড়া নিজে পালন করলে লাভটা আরো বেশি হবে।
লাভ নিরভর করে কে কতটুকু কম খরচ করে দক্ষতা খাটিয়ে পালন করতে পারে এবং প্রডাকশন আনতে পারে তার উপর।
ভাগ্য খারাপ থাকলে এবং জটিল সমস্যা হলে সব মারা যেতে পারে তাই ঝুকি নিয়ে ব্যবসা করতে হবে।
অসুবিধা ঃ
ফারমে কিছুটা গন্ধ হয়,পুরুষ কোয়েলের শব্দ অনেকের কাছে ভাল লাগেনা এবং লেয়ার ডিমের মত এখনো বাজার তৈরি হয়নি।
কি করলে আরো বেশি ডিম পাড়বে এবং বেশি লাভজনক হবে।
১।লাইটিং প্রোগ্রাম মেনে চলা।
২।খাবারঃ সঠিক সময়ে সঠিক খাবার ,কোয়েলের জন্য আলাদা খাবার পাওয়া যায়না তাই খাবারে বা পানিতে এমাইনো এসিড বা ভিটামিন দিতে হয়।এমাইনোভিট প্লাস বা ভাইজেস্ট ১মিলি ১ লিটারে ১ বেলা।
ডিম পাড়ার শুরুতে ক্যালসিয়াম ও এমাইনো এসিড দিতে হয়।সান ক্যাল পি বা ক্যাল পি ভেট ১মিলি ১ লিটারে বিকালে।
৩।লিটার ;এদের যে মারাত্মক রোগ হয় টা লিটারে কারনে হয়( কোয়েল ডিজিজ)
তাই খাচায় পালা ভাল বেশি।
৪।হঠাত আবহাওয়া পরিবরতঁনের সাথে ব্যবস্থা নেয়া কারণ এই সময় কোয়েল বেশি অসুস্থ হয়।
৫।আলো বাতাস ও খোলামেলা পরিবেশ যাতে এমোনিয়া গ্যাস না হয়।
৬। বিশুদ্ধ পানি দেয়া।
৭।বাচচার ভাল ব্যবস্থাপনা করা।
৮।ব্রিডার কোয়েল কে ভাল ভিটামিন মিনারেল দেয়া।